প্রতি বছর এই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় আর্মি স্টেডিয়াম ভরে উঠতো দর্শকদের উপস্থিতিতে।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের আয়োজকরা মনে করেন, জাতীয় স্বার্থে এই উৎসবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী প্রতিবারের মতো এ বছরও গোড়ার দিকে আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দের জন্য সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে আবেদন করেন তারা। আগস্ট মাসের মধ্যে ভারতের প্রথম সারির উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী, বাংলাদেশের নবীন ও প্রবীণ শিল্পী ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও যাত্রার তারিখ নির্ধারণসহ সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়। সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের ৩১ আগস্ট তারিখের চিঠিতে মাননীয় পোপের সফর উপলক্ষে প্রার্থিত সময়ে (২০-২৮ নভেম্বর) আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ সম্ভব নয় বলে আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করে।
বেঙ্গল বলছে, নির্ভরযোগ্য সূত্রে যখন জানা যায় যে, পোপ মহোদয়ের আগমনের তারিখ ৩০ নভেম্বর অর্থাৎ উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব শেষ হবার দু’দিন পর এবং তার প্রধান অনুষ্ঠানটি আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না, তখন ৯ সেপ্টেম্বর তারিখে বরাদ্দের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে আবেদন করেন তারা। এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
পাঁচ বছর একই নিয়মে নির্ধারিত ভাড়া জমা দিয়ে আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এ বছর জায়গার বিষয়টি সময়মতো মীমাংসা না হওয়ায়, কাজ এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ইতোমধ্যে বিকল্প স্থান চিহ্নিত করে এর ভিত্তিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে বিদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই সুবাদে জাতীয় রাজস্ব বিভাগে নির্ধারিত কর জমা দেওয়া হয়। তবে বিকল্প স্থানটিতে রাতভর অনুষ্ঠান পরিচালনার অনুমতি পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিকমানের বড় পরিসরের এই উৎসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনা সম্পন্ন করতে কমপক্ষে আট মাস সময় প্রয়োজন হয়। সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাৎ সাত মাস নিবিড়ভাবে সমন্বয়ের পর পরিকল্পনা পরিবর্তন বা সংকোচন সম্ভব নয়, কারণ এর ফলে বিগত পাঁচ বছরের চর্চায় উৎসবের যে চরিত্র দাঁড়িয়েছে তা বিপন্ন হতো। একই কারণে স্থান পরিবর্তনের কারণে তারিখ, সময় বা অনুষ্ঠানের পরিধি সংকোচন বা শিল্পী পরিবর্তন কোনোটিই এ পর্যায়ে সমীচীন হতো না বলে মনে করেন আয়োজকরা।
বিদেশি শিল্পীদের জন্য সরকারের আর্মি স্টেডিয়াম একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে সবার কাছে পরিচিত আর তাই চূড়ান্ত পর্যায়ে বিকল্প ভেন্যু বিবেচনার কোনো অবকাশও নেই আয়োজকদের হাতে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা ও প্রবহমান সাংস্কৃতিক ধারাকে নবীন দৃষ্টিভঙ্গিতে সঞ্জীবিত করা এবং এই ধারার আলোকে চর্চা ও সাধনা অব্যাহত রাখাই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য। সাংস্কৃতিক চর্চার নানামুখী কর্মপ্রবাহের মধ্য দিয়ে জনরুচি, জীবন ও মননে মাত্রা সঞ্চার করতে আমরা প্রয়াসী। সংগীত দিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৮৭ সালে।
ভারতবর্ষে উচ্চাঙ্গসংগীতের ভিত প্রতিষ্ঠায় যাদের অন্যতম অবদান রয়েছে এবং পঞ্চাশ-ষাটের দশকে ও পরবর্তীকালে শাস্ত্রীয়সংগীতের বার্তা যারা সারা বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছিলেন, আলাউদ্দিন খাঁ, আলী আকবর খাঁ, উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, আয়েত আলী খাঁ, বিলায়েৎ খাঁ— পারিবারিক সূত্রে তাদের সকলেই এ দেশের সঙ্গে যুক্ত।
উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১২ সালে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের তখন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, বড় পরিসরের অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে শাস্ত্রীয়সংগীত উপস্থাপন করলে সাধারণ দর্শকের মাঝে তা সাড়া জাগাবে। নিয়মিতভাবে উৎসব আয়োজন করলে তা জনরুচিকে প্রভাবিত করবে এবং উচ্চাঙ্গসংগীতের যে গৌরবময় উত্তরাধিকার রয়েছে, তা পুনরুজ্জীবিত হবে। সেভাবেই চলছিলো সব। এবার বাধার মুখে পড়লো এমন একটি নান্দনিক আয়োজন। সবার প্রত্যাশা, ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’ আগের জৌলুসেই ফের নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
ষষ্ঠ বর্ষে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পরিসর আরও বড় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিলো। শুধু উপমহাদেশের উচ্চাঙ্গসংগীত নয়, এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল। গ্র্যামি নমিনি (১৯৮১) পদ্মভূষণ ড. এল সুব্রহ্মণ্যন রচিত ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল কম্পোজিশন পরিবেশন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় ৫৬ সদস্যের অর্কেস্ট্রা দলকে। উৎসবে যোগ দিতে সম্মত হয়েছিলেন মেওয়াতি ঘরানার প্রবাদপ্রতিম শিল্পী পণ্ডিত যশরাজসহ আরো অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এসও