বাংলানিউজ: কেমন আছেন? নতুন কাজের খবর কি?
ন্যানসি: দেড় মাস ধরে নতুন গান করিনি। ময়মনসিংহে আছি, শ্বশুরবাড়িতে।
বাংলানিউজ: শীত শুরু হচ্ছে, শো নিশ্চয়ই আসছে?
ন্যানসি: জানিনা। আমার কাছে কোনো শো-এর প্রস্তাব আসেনি।
বাংলানিউজ: আপনি কি হতাশ?
ন্যানসি: না। হতাশ নই। আমি বুঝতে পারছি, অডিওতে এখন আবার একটু খারাপ সময় যাচ্ছে। প্রায়ই তো এমনটি হচ্ছে, আবার কেটেও যাচ্ছে।
বাংলানিউজ: বছর দেড়েক আগেও বেশ চাঙ্গভাব ছিলো…
ন্যানসি: সেটাই। সত্যি বলতে কি, অনেক শিল্পীরই মূল আয় কিন্তু কনসার্ট থেকে আসে। কিন্তু আমার মূল আয় গানের রেকর্ডিং থেকে আসে। ২০১৫ সালের কথা। ময়মনসিংহে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছি। আমার সম্বল মাত্র ছয় লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আমার আব্বা আমাকে পাগল বলেছিলেন। কিন্তু আমি জানতাম আমি পারবো। ধার দেনা নয়, রোজগারের টাকা দিয়েই বাড়ির কাজ শেষ করবো। হলোও তাই। এক বছরের রেকর্ডিংয়ের টাকা দিয়ে বাড়িটি তৈরি করেছি, ভাবা যায়!
বাংলানিউজ: আপনার পারিশ্রমিক তো বেশি…
ন্যানসি: জ্বি, একটু বেশিই। গান প্রতি ৫০ হাজার টাকা নিই আমি। এক যুগে গানের মানের ক্ষেত্রে যেমন কমপ্রোমাইজ করিনি, আবার পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রেও তা-ই। ক্যারিয়ার টেকাতে সম্মানি কমিয়ে দিতে রাজি নই আমি।
বাংলানিউজ: কিন্তু আপনি তো বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে অনেক অখ্যাতদের সঙ্গে গান করেছেন, যেগুলো তেমন বেশি ফোকাসড নয়…
ন্যানসি: বিষয়টা এমন নয়। আমার ফ্লপ গানের সংখ্যা খুবই কম। এটা উল্লেখ করার মতো নয়। সবাই জানেন আমার সুপারহিট কিছু গান আছে। অন্যভাবে বলতে গেলে, আমার অধিকাংশ গানই এভারেজ হিট। এ দিক দিয়ে আমি খুবই ভাগ্যবতী। আমার গানের সংখ্যা গুণে দেখিনি। তবে এটা বলতে পারি, আমার দশ ভাগ গান হয়তো মানুষ পছন্দ করেনি।
বাংলানিউজ: সফল ক্যারিয়ারের জন্য নিশ্চয়ই কারো কারো প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ?
ন্যানসি: অবশ্যই। হাবিব ভাইয়ের (হাবিব ওয়াহিদ) হাত ধরে যাত্রাটা শুরু না হলে, হয়তো এমন সাফল্য আসতো না। প্রায়ই ভাবি, হাবিব ভাইয়ের বাইরে যতো ভালো ভালো গান গেয়েছি সবই তো তার কারণেই। কারণ তিনি সুন্দরভাবে আমাকে উপস্থাপন করেছিলেন। এ কারণেই আমার প্রতি অন্যদের আস্থা তৈরি হয়েছিলো। এ ক্ষেত্রে হাবিব ভাইয়ের আগে যার নাম বলবো, তিনি ফেরদৌস ওয়াহিদ। এই মানুষটিই আবিস্কার করেছিলেন যে, আমি সুন্দরভাবে গাইতে পারি। তিনিই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার ছেলের কাছে…। আর ভক্তদের কথা কী বলবো! তারা সব সময় আপনার পাশে রয়েছেন।
বাংলানিউজ: দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আপনি তো কয়েকবার সমালোচনারও জন্ম দিয়েছেন।
ন্যানসি: দেখুন, শিল্পী ন্যানসির জন্য সমালোচনা হয়নি। আমার সংসার জীবন বা রাজনৈতিক দর্শন তো ব্যক্তি ন্যানসির, শিল্পীর নয়। আমার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, সন্তানের মৃত্যু, মায়ের মৃত্যু— সংগীত জীবনে এগুলো প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে, পারেনি। আমি সব সামলে নিয়েছি। তেমনি রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশের পর যা ঘটেছিলো, সেগুলো গানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারতো, পারেনি। আমি ওভারকাম করেছি। না হয় চার বছর আগেই আমার গান গাওয়া বন্ধ হয়ে যেতো।
বাংলানিউজ: এখন তো খুব একটা কাজ নেই আপনার হাতে…
ন্যানসি: (হেসে) আর কতো? এক যুগ হয়ে গেলো না! এখন তো রিটায়ার্ডের সময়। আমি খুব বেশি গান করিনি, তাতেও খুশি আছি, ভালো গান বেশি করতে পেরে। আমাদের আইডল রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কনক চাঁপা সবার ক্যারিয়ারে এক সময় এক ধরনের বিরতি আসে। এটাই স্বাভাবিক। আমারও সময় হয়েছে। আমি সেজন্য প্রস্তুত।
বাংলানিউজ: সন্তানদের নিয়ে কী ভাবছেন? ওরাও আপনার মতো শিল্পী হতে চায়?
ন্যানসি: বড় মেয়ে রোদেলার বয়স ১০ বছর। ওর গলা আমার বেশ পছন্দের। দারুণ গান করে। কিন্তু ও অনেক বেশি চাপা স্বভাবের। এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় আছি। অন্যদিকে নায়লা বেশ চটপটে। এইটুকুন বয়সে ওর তাল-জ্ঞান দেখে আমি অবাক। ওরাই ঠিক করবে ভবিষ্যতে কী হবে। তবে রোদেলার কণ্ঠে অচিরেই আমি গান রেকর্ড করবো বলে ভাবছি। দেখা যাক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৭
এসও