বুধবার (২৮ নভেম্বর) মধ্য রাতে ফেসবুকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা আমজাদ হোসেনের একটি ছবি পোস্ট করে আবেগঘন কথা লিখেছেন ছোট ছেলে নির্মাতা ও অভিনেতা সোহেল আরমান। হাসপাতাল থেকে লেখা সেই পোস্টটিতে সুস্থ হয়ে বাবার ফিরে আশার অপেক্ষার কথা জানান তিনি।
ফেসবুকে সোহেল আরমান লেখেন, ‘পরম যত্ন আর সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পাচ্ছেন বাবা। সন্তান হয়ে এটাই চেয়েছিলাম। বাবার নিঃশ্বাস যতক্ষণ থাকবে উনি যেন সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাটিই পান। সেই চাওয়াটা পূর্ণ হয়েছে। বামরুনগ্রাদের এআইসিইউ’র (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) আশেপাশে আমি আর বড় ভাইয়া (সাজ্জাদ হোসেন দোদুল) তীর্থের কাকের মত বসে আছি। ঘুমহীন দুই ভাই। খুব কষ্টের অপেক্ষায়, কখন ডাক্তার এসে বাবাকে নিয়ে আশার বাণী দেবেন। ’
তিনি আরও লেখেন, ‘‘সন্ধ্যার দিকে এক মেডিকেল ছাত্রী বাবাকে দেখে এসে আমাকে বললেন, ‘আপনার বাবার হৃদস্পন্দন ভালো’। তার জোরেই নাকি বাবা এখনও অনেক গুরুতর ধকল সইতে পারছেন। আমি মনে মনে বলি বাবার হৃদয়তো অনেক শক্তিশালী হবেই। কারণ তার হৃদয় অনেক বড়। আকাশের চেয়েও বড়। এই হৃদয় দিয়েই সবাই কে অকৃপণভাবে উজাড় করে ভালোবেসেছেন আর তার অনবদ্য শিল্পকর্মগুলো সৃষ্টি করেছেন। তাই বাবার হৃদয়টাই মৃত্যুর কাছে হার মানতে চাইছে না। এখনো খুব দূর থেকে হলেও আলো জ্বালছে। আশার বাণী পাঠাচ্ছে। ’’
‘বাবা তোমাকে সবাই ভালোবাসে অপেক্ষায় আছে, দোয়া পড়ছে। আশার আলো দেখছে। বাংলাদেশ থেকে এই বিদেশের মাটিতে হাসপাতালের প্রতিটি মানুষ যারা বাবার চিকিৎসায় নিয়োজিত কেউ চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না। তাদের সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোহেল আরমান লেখেন, ‘বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য থাকলো হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। আপনার জন্যই সফল হয়েছে বাবার জন্য বিদেশে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। বাকিটা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা। ’
সবশেষে ‘এইতো প্রেম’খ্যাত নির্মাতা লেখেন, ‘এখন রাত হয়ে গেছে। হাসপাতালের জানালা দিয়ে আকাশের তারা দেখি, সময় কাটছে না। তোমার অপেক্ষায় আছি বাবা। ’
গত ১৮ নভেম্বর নিজ বাসভবনে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে আমজাদ হোসেনকে দ্রুত রাজধানীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয় ইমপালস হাসপাতালে। এই হাসপাতালে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
এদিকে রোববার (২৫ নভেম্বর) আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমজাদ হোসেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৮
জেআইএম