শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় বিসমিল্লা। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট ব্যাপ্তির নাটকটি হলভর্তি উপস্থিতিকে দিয়েছে ট্র্যাজেডি-মেলোড্রামা মিশ্রিত আনন্দ-বেদনার খাটি নির্যাস।
সুমনা কাঞ্জিলালের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন অঞ্জন কাঞ্জিলাল। দীর্ঘদিন ধরে দিল্লীর বিভিন্ন মঞ্চে সফলতার সঙ্গে বাংলা নাটক নিয়ে কাজ করে আসছে গ্রীন রুম থিয়েটার। মাত্র ১২ শতাংশ বাঙালির দিল্লিতে অবিশ্বাস্য পর্যায়ে জনপ্রিয় এ নাট্যদল। দিল্লী কিংবা ভারতের অন্যান্য রাজ্যেই শুধু নয়, উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নাটক মঞ্চায়ন করে প্রশংসিত হয়েছে দলটি।
এবারে বাংলাদেশে বিসমিল্লা নাটকের মঞ্চায়নেও বরাবরের মতো দর্শক মাতালো গ্রীন রুম থিয়েটার। অসাধারণ মঞ্চায়ন, প্রাণবন্ত অভিনয় নাট্যশালার হলভর্তি দর্শককে মুগ্ধতায় ভাসিয়েছে। দারুণ গল্প আর শিল্পীদের অসাধারণ অভিনয়ে আচ্ছন্ন হয়ে প্রতিটা দৃশ্যেই দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছেন, জানিয়েছেন বাহবা।
এবারে নাটকের গল্প প্রসঙ্গে আসা যাক… সত্তুরের দশকের একটি বিখ্যাত পত্রিকার দুই রিপোর্টার বিশ শতকের শুরুর দিকের এক প্রখ্যাত নাট্যাভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার নিতে যান। পতিতাপল্লী থেকে উঠে আসা সেই অভিনেত্রী খুলে ধরেন নিজের জীবনের একেকটি পাতা। আর তাতে বেরিয়ে আসে তার রক্ষিতা জীবন, শারীরিক-মানসিক নানা অত্যাচার আর তখনকার সমাজ বাস্তবতা। সব ছাপিয়ে উঠে আসে তার প্রেমিক, বেহালাবাদক বিসমিল্লা’র কথা।
তারাময়ী নামের নিরক্ষর ওই অভিনেত্রী কী করে অন্ধকার থেকে প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে আবার হারিয়ে যান আগের অন্ধকারে, বিসমিল্লা তার এক জ্বলন্ত দলিল।
যদিও তারাময়ী কোনো ঐতিহাসিক চরিত্র নয়। কিন্তু শিল্পসংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আজকের দিনে থিয়েটারের যে অবস্থান তার পেছনে আছে এই তারাময়ীর মতো অনেক অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত গণিকাদের অবদান। অভিনয়ের প্রতি তাদের নিঃস্বার্থ প্রেম, ভালোবাসা আর আত্মত্যাগের ফলেই আজকের দিনে এ অঞ্চলে শক্ত এক শিল্পমাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়েছে মঞ্চনাটক। নাটক বিসমিল্লা আজ থেকে একশ বছর আগেকার থিয়েটারের মানুষদের গল্প নিয়ে নির্মিত। আবেগ, স্বার্থপরতা, প্রেম আর আত্মত্যাগের নাম- বিসমিল্লা।
নাট্যদল প্রাঙ্গনে মোর’র আয়োজনে গত ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা- ২০১৯’। ‘আমি বাংলায় ভালোবাসি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি’ স্লোগানে এবারের মেলায় বাংলাদেশ-ভারতের ৯টি নাট্যদল অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশের পাঁচটি, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লি মিলিয়ে চারটি নাট্যদল। এটি ছিল দুই বাংলার নাট্যমেলার ১১তম আসর।
৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন- ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
এদিকে এ আয়োজনের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ‘থিয়েটারের সংকট- দর্শক না ভালো নাটক’ শিরোনামে এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া একইদিন সন্ধ্যায় তিন নারীকে প্রদান করা হয় ‘প্রাঙ্গণেমোর নাট্যযোদ্ধা সহযোদ্ধা সম্মাননা- ২০১৯’। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন- নাট্যযোদ্ধা মামুনুর রশীদের সহধর্মিণী গওহর আরা চৌধুরী, নাট্যযোদ্ধা আতাউর রহমানের সহধর্মিণী শাহিদা রহমান ও নাট্যযোদ্ধা লিয়াকত আলী লাকীর সহধর্মিণী কৃষ্টি হেফাজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
ওএফবি/এইচজে