১৯ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ের অগাস্ট ক্রান্তি ময়দানে একটি বিক্ষোভ সমাবেশে যোগদান করার আহবান জানিয়ে ১৮ ডিসেম্বর সকালে টুইটারে একটি বার্তা পোস্ট করেন বলিউড তারকা ফারহান আখতা। তার পোস্টের সঙ্গে একটি বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ ছবিও ছিল।
সেদিন সকালে ফারহানের শেয়ার করা ছবিতে ভারতের যে মানচিত্র দেখানো হয় তাতে কাশ্মীরকে তিনখণ্ডে বিভক্ত এবং অস্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে। এছাড়া ছবিটির বক্তব্যগুলো নিয়েও তাৎক্ষণিক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ফারহানের পোস্ট রিটুইট করে সন্দীপ মিত্তাল নামের একজন আইপিএস কর্মকর্তা তাকে সতর্ক করে দেন। তিনি লেখেন, আপনার এটাও জেনে রাখা উচিত যে, আপনি ভারতীয় দণ্ডবিধি ১২১ ধারায় একটি অপরাধ করছেন। আর এটা অনিচ্ছাকৃতভাবে করছেন না। যে জাতি আপনার জীবনের সবকিছু দিচ্ছে তার কথাও একটু ভাবুন। আইনকে বুঝুন।
এরপর সেদিন বিকেলেই ফারহান আখতার তার বক্তব্যকে পরিষ্কার করে লেখেন, ‘ছবির বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। তবে কেবলমাত্র খেয়াল করলাম, ভারতের মানচিত্রটা ভুল আছে। কাশ্মীরের প্রতিটি অংশ ও প্রতিটি ইঞ্চি ভারতের অংশ। আমি এই ত্রুটিপূর্ণ মানচিত্র প্রত্যাখ্যান করছি। আমি এটা আগে খেয়াল করিনি বলে দুঃখিত। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। ’
তবে এই কথায় চিড়ে ভেজেনি করুণা সাগর কাশিমশেঠি নামের এক আইনজীবীর। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অভিযোগ এনে মামলা ঠুকে দিয়েছেন ফারহান আখতারের নামে। ফারহানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে ওই মামলার এজাহারে।
সায়দাবাদ পুলিশ স্টেশনের সার্কল ইন্সপেকটর শ্রীনিবাস এক সংবাদমাধ্যমকে জানান, ওই আইনজীবীর অভিযোগ, ফারহান তার টুইট পোস্টে মুসলিম, রূপান্তরকামী, নাস্তিক, আদিবাসী ও দলিতদের দেশের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য উস্কানি দিয়েছেন। ফারহানের মন্তব্য বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা ডেকে আনতে পারে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী আইনজীবীর দাবি, ১৮ ডিসেম্বর ফারহানের করা একটি টুইট বিভিন্ন এলাকায় চূড়ান্ত অরাজকতার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি তার অভিযোগে বলেছেন, ‘আমি আমার টুইটার অ্যাকাউন্টটি ব্রাউজ করার সময় ১৮ ডিসেম্বর ফারহান আখতারের টুইটার হ্যান্ডলে পোস্ট করা একটি টুইট দেখতে পাই। তাতে বলা হয়েছে, ‘এই বিক্ষোভ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা সম্পর্কে আপনাদের জানা দরকার। মুম্বাইয়ের অগাস্ট ক্রান্তি ময়দানে দেখা হবে। শুধু সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর সময় শেষ। ’ এর সঙ্গে একটি বিবৃতিসহ ছবিও শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনে অমানবিকভাবে মুসলিম, রূপান্তরকামী, নাস্তিক, দলিত ভূমিহীন এবং নথিপত্র নেই এমন মানুষকে নাগরিক হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে না এবং তাদের জেলে ঢোকানো হতে পারে, কিংবা দ্বীপান্তর করা হতে পারে। ’
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ফারহান জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও শঙ্কা সৃষ্টি করার জন্য ছবিটি টুইটারে ইচ্ছাকৃতভাবে পোস্ট করেছেন এবং তাদের উস্কানি দিয়েছেন। এর পরে সমগ্র ভারতে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ শুরু হয়, যাতে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়।
তবে এ নিয়ে ফারহান আখতারের কোন মন্তব্য এখনও জানা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
এমকেআর