সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সামনে ইশরাত নিশাতের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় তার মরদেহ। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই কথা বলেন ভালোবাসার মানুষগুলো।
ইশরাত নিশাতকে নিয়ে বিশিষ্ট নাট্যব্যাক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, নিশাত আমার কন্যার মতো নয়, সে আমার কন্যা। ওর মা-ও মারা গিয়েছিলেন এমন গভীর রাতে। ওকে আগলে রাখতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু এমন উচ্ছল প্রাণের মানুষকে কী আর আগলে রাখা যায়! আপনারা সকলে মঞ্চের মানুষ হারিয়েছেন, আমি ঘরের মানুষ এবং মঞ্চের মানুষ, দু’জনকেই হারিয়েছি। নিশাত মানুষকে ভালোবাসতে জানতেন। সে নাটক ও জীবনকে একীভূত করেছিলেন।
নির্দেশক এবং অভিনেতা আলী যাকের বলেন, নিশাতকে আমি মেয়ের মতো স্নেহ করতাম। তার চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া কঠিন। তাকে হারিয়ে মঞ্চ অনেক কিছু হারালো।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এই শিল্পকলা থাকবে, শিল্পকলার আড্ডা থাকবে, শুধু এখন থেকে সেখানে নিশাত থাকবেন না। সে কখনো শুধু একটি দলের হয়ে নয়, বরং সকল দলের হয়ে কাজ করেছেন। সকলকে ভালোবেসেছেন।
ইশরাত নিশাত এর নাট্য দল ‘দেশ নাটক’র কামাল আহমেদ বলেন, নিবেদিত একজন নাট্যকর্মী ছিল নিশাত। নাটকের যুদ্ধকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সে আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, নাটকের জন্য অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ছিলেন নিশাত। এমন নিবেদিত প্রাণ আর ভালোবাসার মানুষ আরেকজন পাওয়া কঠিন।
পরিবারের পক্ষ থেকে নিশাতের ছোটবোন নারিতা বলেন, আমার বোনের কাছে আপনারা, থিয়েটারের মানুষগুলোই ছিল প্রথম পছন্দ। এই থিয়েটার থিয়েটার করেই জীবনটা দিয়ে গেল ও। আপনাদের কাছে কখনো যদি আমার বোন কোন অন্যায় বা ভুল করে থাকে, তাহলে তাকে আজ ক্ষমা করে দেবেন, এটাই প্রত্যাশা করবো।
এসময় ইশরাত নিশাতের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আরও উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী সারা যাকের, সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী, কামাল বায়েজিদ, বৃন্দাবন দাশসহ মঞ্চ ভালোবাসা অসংখ্য মানুষ। দলগতভাবে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, স্রোত আবৃত্তি সংসদ, সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়সহ বেশকিছু সংগঠন।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ নিশাতের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
নাট্যশালার সামনে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ইশরাত নিশাতের মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে। সেখানে তার জানাজা শেষে বনানী গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এছাড়া তাকে নিবেদন করে আগামী ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।
এর আগে রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর গুলশানে বোনের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইশরাত নিশাত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
এইচএমএস/জেআইএম