কলকাতা: বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। রাজ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে।
তবে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলসহ বাম-কংগ্রেস দলের নেতানেত্রীদের মতে, বিজেপি একটি অবাঙালিদের দল। দলটি বাংলার মনীষী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সম্মান দেবে কী করে, তাদের সম্পর্কে তো ন্যূনতম জ্ঞানই নেই বিজেপি’র।
সে তথ্য ভুল প্রমাণ করার জন্য নির্বাচনের আগে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে যেতে চাইছে কেন্দ্র এবং রাজ্য বিজেপি নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তা করতে গিয়ে উল্টো পরিস্থিতি জটিল করছে বিজেপি। আর তাতে জ্ঞানের বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর মন্তব্য যে সঠিক, তা প্রমাণ হয়ে গেল গত বুধবারের (২৩ ডিসেম্বর) একটি ঘটনায়।
প্রায় ৫১ বছর আগে প্রয়াত বাঙালির বরেণ্য অভিনেতা জহর গাঙ্গুলির বাড়ির সামনে গিয়ে তার খোঁজে নাম ধরেই হাঁকডাক করলেন বিজেপি কর্মীরা। এখানেই শেষ নয়, হাতে করে নিয়ে গেলেন প্রয়াত অভিনেতার নামে আমন্ত্রণ পত্রও। দিয়ে এলেন তার নাতনির হাতে। এহেন আক্কেল জ্ঞানহীন কাণ্ড দেখে নেতাদের মিথও ভাঙাননি সুজাতা দেবী।
ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? ওইদিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার ডোভার লেনে প্রয়াত অভিনেতা জহর গাঙ্গুলিকে আমন্ত্রণ জানাতে তার বাড়িতে হাজির হন দুই বিজেপি কর্মী। সেই বাড়িতে বর্তমানে থাকেন অভিনেতার নাতনি তথা বিখ্যাত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষিকা সুজাতা দেবী।
তিনিই জানিয়েছেন গোটা বিষয়টি। সুজাতা দেবী বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় দু’জন মাঝবয়সী ব্যক্তি জহরদা বলে ডাকাডাকি শুরু করেন।
মৃত্যুর ৫১ বছর পর দাদুর নাম ধরে ডাকাডাকি শুনে চমকে ওঠেন তিনি। এরপর সুজাতা দেবী বাইরে আসতেই দুই ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘জহরদা কি বাড়ি আছেন’?
তাদের পরিচয় জানতে চাইলে ওই দু’জন নিজেদের বিজেপি কর্মী বলে পরিচয় দেন। সুজাতা দেবী মনে মনে ভাবেন, যারা এমনভাবে ডাকছেন তাদের দাদুর সম্বন্ধে জ্ঞানই নেই। ফলে তাদের ভুল ভাঙাতে যাওয়া একপ্রকার বৃথা চেষ্টা। তাই অভিনেতার প্রয়াত হওয়ার বিষয়টি চেপে যান তিনি। বলেন, কী ব্যাপার আমাকে জানান।
তখন প্রয়াত অভিনেতার নাম লেখা একটি আমন্ত্রণ পত্র তার হাতে দিয়ে বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিবস উপলক্ষে রক্তদান শিবির হচ্ছে। ওইদিন সকালে জহরবাবুকে রক্তদান শিবিরে থাকতেই হবে। ’ কিছু না বলে আমন্ত্রণ পত্রটি নিয়ে নেন তিনি।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত হওয়া অভিনেতার সম্পর্কে কি কোনও জ্ঞানই নেই স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের? নাকি নেতৃত্বের চাপে খাটি বাঙালি প্রমাণে মরিয়া রাজ্য বিজেপি? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে রাজ্য রাজনীতিতে।
এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, আমাদের কর্মীরা ভুল করেছে। হয়ত অন্য কোনও জহর গাঙ্গুলি বাড়িতে আমন্ত্রণ পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রয়াত অভিনেতার বাড়ি চলে গিয়েছেন। ওদের আরও দেখেশুনে কাজ করতে বলব। তবে আমরা কিন্তু বাংলার শিল্প, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
বিরোধীদের মত বিশিষ্টজনদের প্রতি জ্ঞান নেই বলেই এইরকম কাজ। কারণ ওই অঞ্চলে অভিনয় জগতে জহর গাঙ্গুলি একজনই ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
ভিএস/জেআইএম