ফকির লালন শাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এক ঐন্দ্রজালিক মোহময়তা বিস্তার করে চলেছেন। দিনদিন তার সে ঐন্দ্রজালিক বলয়ের বিস্তৃতি ঘটছে।
রোববার (১৭ অক্টোবর) ফকির লালন সাঁইয়ে ১৩১তম তিরোধান দিবস। তিনি ছিলেন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত তিনি।
অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে।
তার গানগুলো মূলত বাউল গান হলেও এই গোষ্ঠী ছাড়াও যুগে যুগে বহু সংগীতশিল্পীর কণ্ঠে লালনের গান উচ্চারিত হয়েছে। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন লালন।
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার এক গভীর জঙ্গলে সাধক শিরোমণি ফকির লালন শাহ তার অনুসারী ভক্তদের নিয়ে যে আখড়া গড়ে তুলেছিলেন তা এখন সারা বিশ্বের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ফকির লালন শাহ তার গানের বাণীর ভেতর দিয়ে একটি সুসংঘবদ্ধ জীবন বিধানের নির্দেশনা দিয়েছেন।
লালনের দ্যুতি এমনই তীব্র ও রহস্যময় যে তারপরে আর কোনো মরমী সাধক নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। দুই শতাব্দী ও চার দশক পেরিয়ে গেলেও আজও লালন মরমী জগতের সার্বভৌম ব্যক্তি।
প্রতি বছর লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবসে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় কালিন্দী নদীর ধারে লালন ভক্ত-সাধকদের মিলনমেলা বসে। তিন দিন ধরে অনুষ্ঠান চলে। তবে এ বছর করোনাকালের জন্য সেই অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২১
জেআইএম