ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

ভালোবেসেই বিয়ে করবো: খায়রুল বাশার

নাজমুল আহসান তালুকদার, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
ভালোবেসেই বিয়ে করবো: খায়রুল বাশার খায়রুল বাশার

পড়াশোনা করেছেন সংগীত বিভাগে। তবে গানের মানুষ না হয়ে হয়েছেন অভিনয়ের মানুষ।

শুরুটা মূকাভিনয় দিয়ে হলেও নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনা তার মধ্যে। সহজেই যেকোনো চরিত্রে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাও রয়েছে তার। ইতোমধ্যে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। বলছি খায়রুল বাশারের কথা।  

তরুণ প্রজন্মের এই দর্শকপ্রিয় অভিনেতা ‘স্বজন’ নামের নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে আলাপে মেতেছিলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

বাংলানিউজ: ‘স্বজন’ নাটকে আপনার চরিত্র কেমন?
খায়রুল বাশার: এই নাটকের চরিত্রে একটু বর্ণচোরা লোক। পরিবারের কাছে একরকম, বাইরে অন্যরকম। নাটকে আমি একজন প্রতারক। নানা জায়গায় মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বেড়াই। এরপর বিভিন্ন ঘটনার ভিতর দিয়ে একটা পরিণতির দিকে যায়।  

বাংলানিউজ: সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, গান নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা আছে?
খায়রুল বাশার: গান গাওয়া হয়। গান ছাড়া অস্বস্তি লাগে। প্রচুর বাংলা গান শুনি, লিরিকগুলো আমাকে ভাবায়। মুড চেঞ্জ করে। একটা গানের আট বা বারো লাইনে একটা গল্প চোখে দেখি। সেখান থেকে শিখি। অভিনয়ের জন্যও প্রভাবক। ক্ল্যাসিকাল শেখার খুব ইচ্ছা। শিখে নিজের জন্য হলেও ঘরের কোণে বসে গাইবো। প্রফেশনালি করব কিনা, সেটা নিয়ে ভাবিনি কখনও।  

বাংলানিউজ: সংগীতের ছাত্র, সেখান থেকে অভিনয়ের আসার পেছনের কারণ কী?
খায়রুল বাশার: সংগীতের মানুষ হয়ে ওঠা আমার কাছে অনেক কঠিন মনে হয়। সংগীতচর্চা ভেতর থেকে আসে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্টে অনেকটা স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হওয়া। কিন্তু কোর্স সিস্টেমটায় মনে হলো মিউজিকটা আমাকে দিয়ে হয় না। তখন থেকেই সাংস্কৃতিক সংগঠন, থিয়েটার, মূকাভিনয় করা শুরু করি। সবমিলিয়ে যখন মঞ্চে উঠি তখন মনে হলো অভিনয়ের জায়গাটায় আমি যেটা চাই হয়তো কিছুটা করতে পারছি। তখন ধীরে ধীরে মনে হয় এটাই আমার জায়গা। সেখান থেকেই মঞ্চে লেগে থাকা।  

এরপর নানা মানুষের সঙ্গে পরিচয়। প্রথম দিকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালের জন্য শর্টফিল্ম নির্মাণ হতো, সেখানে অভিনয়  করতাম। সেগুলো ফেসবুকে শেয়ার দিতাম। সেখান থেকে শাওকী সায়েদ ভাই আমাকে পিক করে। তার সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করি। এরপর তার নির্দেশনায় ‘কথা হবে তো?’ নামের একটি নাটকে কাজ করি। এর আগে ‘পুনরাবৃত্তি’ নাটকেও অভিনয় করেছিলাম। তারপর বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক আসা শুরু করে।  

বাংলানিউজ: মূকাভিনয় বাংলাদেশে চর্চিত শিল্প নয়, সেখানকার কাজের সময়টা কেমন ছিল?
খায়রুল বাশার: মূকাভিনয় এখনও খুবই কম হয়। আমরা যখন শুরু করি তখন একেবারেই ছিল না। এখন মূকাভিনয়ের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, সংগঠন হয়েছে। ধীরে ধীরে একটা চর্চা হচ্ছে। আমাদের স্বপ্নই ছিল মূকাভিনয় বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। সেই জায়গা থেকে মঞ্চ, পথ নাটকের প্রচুর প্রোগ্রাম করতাম। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের ভিতর পাঁচশত থেকে সাড়ে পাঁচশত শো করা হয়েছে।  

বাংলানিউজ: মূকাভিনয় বাংলাদেশে কতটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন?
খায়রুল বাশার: স্বপ্ন নিয়ে মূকাভিনয় শুরু করেছিলাম। যদি বেঁচে থাকি এই শিল্প নিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ আছে। আর স্বপ্নতো মূলত অভিনয় করা। অভিনয় কেন করা? এর কারণ আমি গল্প বলতে চাই। একটা চরিত্র ফুঁটিয়ে তুলতে, মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে। আর মূকাভিনয় নিয়ে বলবো হামাগুড়ি দিয়ে চলছি। সামনে আরও হাঁটতে চাই। সামনে আরও সুযোগ আসবে, বিচিত্র এসব চরিত্র বয়ে নিতে পারবো বলে মনে করি। চলছে, দেখা যাক।
 
বাংলানিউজ: নাটকে এখন নিয়মিত মুখ আপনি, কোনো সীমাবদ্ধতা বোধ করেন? 
খায়রুল বাশার: দুই দিনে একটা নাটক শেষ করা, এর মধ্য দিয়ে একটা গল্প শেষ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। সঙ্গে খুবই কষ্টকর। যখন একটা চরিত্রে গ্রাফ ক্রিয়েট করি সেটা এই অল্প সময়ে মিলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। আমার মনে হয় কমপক্ষে একটা নাটকের জন্য তিনদিন সময় প্রয়োজন। দেখা যায় দিনের কাজটা গভীর রাত পর্যন্ত করতে হচ্ছে।  

বাংলানিউজ: নাট্যসংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকে বলা আছে রাত ১১টার পর শুটিং বন্ধ করতে। গভীর রাত পর্যন্ত কেন কাজ করছেন?
খায়রুল বাশার: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্ধারিত সময়ে কাজটা শেষ হচ্ছে না, তখন না করেও উপায় নেই। কারণ কাজটা আমারও। এখানে কারও দোষ নেই। কারণ একটি নাটকের জন্য প্রোপার বাজেট থাকা দরকার। বাজেট বেড় গেলেই অনেক জটিলতা কেটে যাবে।  

বাংলানিউজ: ওটিটিতেও কাজ করছেন, টেলিভিশনের সঙ্গে এই মাধ্যমের কাজের ক্ষেত্রে কতটা পার্থক্য দেখছেন?
খায়রুল বাশার: হিউচ পার্থক্য। টেলিভিশনে দ্রুত কাজ করতে গিয়ে এলোমেলো সিকোয়েন্সের কারণে চরিত্রটা ধরে রাখা মুশকিল হয়। কিন্তু ওটিটির ক্ষেত্রে প্রি-প্রোডাকশ থাকে, পর্যাপ্ত সময় বণ্টন করা হয়। যার ফলে চরিত্রটা অনেক গুছিয়ে উপস্থাপন করা যায়। এখানেও সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও ওটিটিতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।  

বাংলানিউজ: সীমাবদ্ধতার মাঝেও আপনার চরিত্রে ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর কাজের আগে কী ধরনের প্রস্ততি নেন?
খায়রুল বাশার: কিছু বিষয় আসলে ব্যাখ্যা করা কঠিন। ভালোবাসার কোনো ব্যাখ্যা করা যায় না। একটা স্ক্রিপ্ট যখন পাই সেটাকে ভালোবাসি। স্ক্রিপ্ট ঠিকঠাক মতো পড়ে গল্পের চরিত্রটি হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। গল্পের পরিস্থিতি, সাইকোলজি বুঝতে চেষ্টা করি। তখন কিছুটা হলেও চরিত্রটা ক্যামেরার সামনে উপস্থাপন করতে পারি। আর ওয়েব ফিল্মের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকেই।

বাংলানিউজ: ভালোবাসার কথা বললেন, অভিনয় আর বাস্তব প্রেমে কী পার্থক্য দেখেন?
খায়রুল বাশার: অভিনয়টা কাজ। এখানে কতটা ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে, নায়িকার দিকে কতটা আগাবো,কতটা সিনটা গভীর করা যায় সেগুলো চিন্তা মাথায় থাকে। বাস্তব জীবনে যখন প্রেম করি, কাউকে ভালোবাসি যেখানে অভিনয় চলে না। সেখানে আমি যা তাই। আর অভিনয়ে চরিত্র অনুযায়ী একটা মানুষকে ভালোবাসতে হয়। আমার মতো করে কাউকে ভালোবাসতে পারি না। দুই জায়গার প্রেম একেকটা একটার এপিঠ ওপিঠ।  

বাংলানিউজ: প্রেম-ভালোবাসার কথা যেখানে চলেই এলো, জানতে চাইবো বাস্তবে কয়টা প্রেম করা হয়েছে?
খায়রুল বাশার: আমার এ জীবনে দুইটা প্রেম ছিল। একটা শর্ট টাইমের অন্যটি একটু লম্বা সময়ের জন্য। লং টাইমের প্রেমটাও কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে  স্থগিত হয়ে গেল। প্রেম ছিল, প্রেম সুন্দর। আমি সেই মানুষটার প্রতি এখনও কৃতজ্ঞ। ওই সময়টার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের অনেক সুন্দর সময় কেটেছে। যদিও পরিস্থিতির কারণে থেমে যেতে হয়েছে, কিন্তু সেই মানুষটার প্রতি আমার ভালোবাসা আজীবন থাকবে।  

কিন্তু পথ চলতে চলতে হয়তো আবার কেউ সঙ্গী হবেন। আমি যদি তার প্রতি যত্নশীল হই, যদি আমার মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি হয় যে- আমি মানুষটার ভালো মন্দে সচেতন তাহলে হয়তো সঙ্গী পেতে পারি আবারও। কবে কখন জানা নেই। তা আমাদের জানা থাকেও না, তবে বিশ্বাস রাখি এমন কিছু ঘটবে হয়তো আবার কাউকে ভালোবাসবো।

বাংলানিউজ: যদি কাউকে সঙ্গী করতেই হয়, সেক্ষেত্রে কেমন মেয়ে পছন্দ?
খায়রুল বাশার: আমি একজন মানুষ চাই, একান্তই আমার মতো। একটি ছকে দাঁড় করিয়ে বৈশিষ্ট্য বা বর্ণনা করা মুশকিল। যদিও দেখি একটা মানুষকে আমার ভালো লাগে, সে আমার প্রতি কেয়ারিং তাকেই আমি গ্রহণ করবো। এক্ষেত্রে তাকেও আমাকে গ্রহণ করতে হবে। দু’জনের মিল হলেই হয়তো একসঙ্গে পথ চলা শুরু হবে।  

বাংলানিউজ: বর্তমানে খায়রুল বাশারের কয়টি প্রেম আছে?
খায়রুল বাশার: আমার প্রেম বা অমন কিছু নাই। থাকলে বলেই ফেলতাম। বর্তমানে প্রেম একটাই, সেটা অভিনয়। অভিনয় আমার জীবনের অন্যতম প্রেম। আর সঙ্গীর প্রেম যেটা, সেটা নাই। হয়ে যেতে পারে। কবে হবে আমার জানা নেই। এখন কাজটাই করে যেতে চাই।  

বাংলানিউজ: প্রেম নেই, বিয়েতে তো মানা নেই। বিয়ের মৌসুম আসতে চলছে, এবার ঘরে ঘরণী আনার ইচ্ছা আছে?
খায়রুল বাশার: এই শীতে কেন দীর্ঘদিন বিয়ের চিন্তা নেই। একটা মানুষ পাওয়া মনে হয় আমার দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার হবে। অবশ্যই ভালোবেসেই বিয়ে করবো। অনেক সময় লাগবে, মনে হয় এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।  

বাংলানিউজ: ব্যক্তি খায়রুল বাশার কেমন?
খায়রুল বাশার: আমি বিচিত্র মানুষ। নিজেকে নিজে বুঝি না। আমি মানুষটা নানা রকম। অভিনয় করতে চাই। অভিনয়ের মতো নিজেকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরেত চাই। আর আমার পরিবারের মানুষদের খুব ভালোবাসি। তাদের জন্য খুব মন কাঁদে। তাদের ভালোলাগায় আমার খুব ভালো লাগে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২১
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।