নাট্যাঙ্গনের প্রিয় দুই মুখ বৃন্দাবন দাস ও শাহনাজ খুশি দম্পতি বিয়ে করেছিলেন ১৯৯৪ সালের ১৯ জানুয়ারি। এর আগে প্রায় নয় বছর প্রেম করেছেন তারা।
নিজেদের সুখ-দুঃখের একসঙ্গে কাটানোর ২৭ বছরে এসে যেন সেই পুরানো দিনের কথাই স্মৃতিচারণ করলেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। যার শিরোনাম দিয়েছেন- ‘ভালো না বাসার ২৭ বছর’।
বৃন্দাবন দাসের সঙ্গে বিয়ের আয়োজন কেমন ছিল? এ প্রসঙ্গে শাহনাজ খুশি লেখেন, না হলুদ, না মেহেদি, না কোনো বিয়ের গহনা শাড়ী, না কোনো মেহমান, গানবাদ্য! এমন কি নিজেরাও সেদিন নানান উৎকন্ঠায় সারাদিন কিছু খাইনি! বোকা বয়সের, বোকা সিদ্ধান্তে আকাশ সমান বোকা করে দিয়েছিল দু’জনকেই!
প্রেম করে বিয়ে করায় কেমন পরিস্থিতি পারিবারিকভাবে তৈরি হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী লেখেন, চারপাশের স্বজনদের তিরস্কার, অভিযোগ আর আক্রোশে থেমে গেলাম আমরা। হিসাব করে কিছু করার বুদ্ধি, বয়স ছিল না! সেই হিসাব করলে কি, সারা পৃথিবীর সব মানুষ এক দিকে রেখে কেউ অনিশ্চিত একটা পথ বেছে নেয়? সেই দুর্বার কাছে আসার দিন থেকে ভালোবাসতে ভুলে গেলাম! মুখরা, আড্ডা প্রিয় আমরা নিশ্চুপ হয়ে গেলাম!
এরপরেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন এই তারকা দম্পতি। সেই কথাই জানিয়ে শাহনাজ খুশি লেখেন, আমাদের অনেক কথা হয়েছে, নাটক-থিয়েটার, দেশ-রাজনীতি, চাল-ডাল, বাসা ভাড়া ও ভবিষ্যত নিয়ে। কিন্তু ভালোবাসা নিয়ে একটি কথাও নয়! অপরাধী সে ভালোবাসাকে বাক্সবন্দী করে, বাঁচতেই হবে-এমন পণ করে কেবলই ছুটেছি দু’জন! অবর্ণনীয় কাঁটা দু’হাতে তুলে, ঘর বাঁধতে, বেঁচে থাকার জন্য!
শোবিজ তারকাদের সংসারে হর-হামেশাই বিচ্ছেদের কথা শোনা যায়। দীর্ঘ ২৭ বছর সংসার জীবনে বৃন্দাবন দাস ও শাহানাজ খুশির মধ্যেও মতের অমিল হয়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশয় হয়েছে। কিন্তু কখনও একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি।
এ নিয়ে শাহানাজ খুশি লেখেন, আমাদের মতের অমিল অনেক হয়েছে, কিন্তু মতবিরোধ হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সংশয় হয়েছে অনেক, কিন্তু কখনো সংঘাত হয়নি! প্রিয় সম্পর্কগুলোর এতো বেশি অবিশ্বাস্য, নিষ্ঠুরতা আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল যে, আজ আর কোনো অচেনা কিছুতেই চমকে উঠি না!
বদলে যাওয়া জীবনে পুরানো স্মৃতি রোমন্থন করে এ নাট্যাভিনেত্রী যোগ করেন, অবস্থা দৃষ্টে, আমাদের স্বপ্নগুলো সব বদলে গেল! অনেক সময় পারও হয়ে গেছে। কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল খাতা আঁকতে দিলে তার মধ্যে চিঠিসহ ফেরত দেওয়া, গল্প বা কবিতার বই উপহার দিলে তার মধ্যে চ্যাপ্টা করা শুকনো গোলাপ ফুল দেওয়া কিংবা চৈত্র সংক্রান্তির মেলায় এক টাকার শঙ্খের আংটি ভরা প্রেম দেওয়া-এসবের কোনটাই আর কাছে আসার পর কোনোদিন হয়নি!
বেঁচে থাকার তাগিদে চড়াই, উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবনের হালখাতায় অনেক হিসেব কষে চলতে হয়। সেই কথার ইঙ্গিত দিয়ে শাহনাজ খুশি লেখেন, বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় ফর্দে ফর্দে ভাগ করে দিতে হয়েছে ধৈর্য্য, শক্তি, সুন্দর যৌবনের উচ্ছ্বল সব আয়ু! আর অপেক্ষা করেছি, শক্তি নিয়ে নতুন করে বেঁচে উঠবার!
বর্তমানে শাহনাজ খুশি ও বিন্দাবন দাস দু’জনই কর্মব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামের দিন ফুরিয়েছে, ফিরেছে ভালোবাসা দিন। বর্তমান সময় কেমন কাটছে? সে বিষয়ে এই অভিনেত্রী লেখেন, এখন আমাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার কুৎসিত ব্যস্ততা কমেছে। এখন অনেক ভালোবাসার সময় হয় আমাদের। আমরা রোজ একই ঔষধের পাতা থেকে এসিডের ট্যাবলেট খাই, সুস্থ থাকার চিন্তায় খুব ভোরে হাঁটতে যাই। বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগ কাঁধে আর দৌড়াতে হয় না বলে চা খাওয়ার পর অনেকক্ষণ কথা হয়। একই ব্যান্ডের কালার দিয়ে, উঁকি দেওয়া সফেদ চুল ঢাকি। একই ডাক্তার দেখিয়ে চশমার পাওয়ার বদলাই। ক্লান্তি এসে দু’জনের চোখে বসায় গল্প করে দু’জনায় হাসি।
এর সঙ্গে আরো লেখেন, তোমার আমার পথচলা এতো ভয়ংকর না হলে, কুসুমে আঁকা স্বপ্নগুলো কেমন হতো সেটা বলি! মাঝে মাঝে দু’জন কিছু না বলে খুব কাঁদি এবং কিছু না বলার পরও আমরা দু’জনায় জানি- আমরা কেন কাঁদছি!! আমাদের এখন ভালোবাসার অনেক সময়, শুধু বেঁচে থাকার সময় বেশি রকম কমে গেছে!
ভালোবাসতে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই জানিয়ে শাহনাজ খুশি লেখেন, ২৭ বছর তবুও কেটে গেলো, এ কংকর বিছানো পথে! দ্রোহ, যুদ্ধে, প্রতিজ্ঞায়, মমতায়। কোনো গিফট, কোনো আনুষ্ঠানিকতা দরকার হয়নি। শুধু আমরা জানি আপনজনহীন হয়ে পড়ার এইদিন। নিঃস্বতা অবধারিত হলে সেটাকে উৎসব মনে করাই ভালো। তুমি এবং আমি, ২৭টা বছর, এ নিঃস্বতার উৎসব করি শক্তি ভরে‼️সময় আমাদের জীবনের কাঙ্ক্ষিত গল্পটা নিষ্ঠুরভাবে বদলে দিয়েছে! কিন্তু ভালোবাসাটা বদলাতে পারেনি। যে ফুলের মালাটা গলায় পরা, এটাও ২৩ বছর পর, সন্তানদের উৎসাহে, উপহারে পরা! তাতে কিছু ফারাক পরেনি।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই তারকা জুটি ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকতে চান। সেই ইচ্ছার কথা তুলে ধরে সবশেষ শাহনাজ খুশি লেখেন, ২৬ বছর আগে রোজ মনে হতো, মরে যাই! এখন রোজ মনে হয়, অনেকদিন বেঁচে থাকি। কষ্টকর সেই পথটা দু’জনে রোজই দেখে আসি! হোক আর্শীবাদহীন, তবুও এ পথচলা যেন থেমে না যায়। ভালোবাসাটুকু যেন গতি না হারায় আমাদের, জীবনের শেষদিনেও....!
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
এনএটি