‘হাই দ্যাখ গো/ তুই ইখানে কেনে, ও তুই লাল পাহাড়ির দেশে যা/ রাঙামাটির দেশে যা হেথাকে তুকে মানাইছে নাই রে/ ইক্কেবারেই মানাইছে নাই রে…’ জনপ্রিয় এই গানের সুরে মাতোয়ারা বুড়ো থেকে শিশুরা। কিন্তু ৫০ বছর আগের লেখা একটি কবিতা কীভাবে গানে রূপ পেল তা হয়তো অনেকের কাছেই অজানা।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে ঠিক কোন ভাবনায় প্রকৃতিপ্রেমের এই কবিতাটি লেখা হয়েছিল সেই গল্প ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন কবি অরুণ চক্রবর্তী।
তার মতে, স্টেশনের পাশে একটি মহুয়া ফুল গাছ। সেটি দেখে মনে হয়েছিল, এখানে নয়, এই রূপ-যৌবন লাল পাহাড়ের দেশেই মানায়। সেই ভাবনা থেকেই কবি লিখেছিলেন ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’।
কবিতার জন্ম ইতিহাস বলতে গিয়ে অরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘সময়টা এপ্রিল মাস। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর স্টেশনের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, নাকে এলো পরিচিত গন্ধ। সেই গন্ধ যার আবেশ আমাকে মাতাল করে দেয়। এখানে মহুয়া? পাতাহীন গাছের অজস্র ঝুমকো মহুয়া ফুল যেন আমাকে ডাকছে। রুমালে কিছু ফুল নিয়ে রাখলাম। মনের ভিতর একটা কষ্ট হচ্ছিল। ওকে এখানে দেখে মনে হয়েছিল, বড্ড বেমানান। এই ধান, আলুর দেশে ও কেন? মহুয়া তো জঙ্গলমহলের রানি! ওকে তো সেখানেই মানায়। ওর গায়ে জড়িয়ে আছে আদিবাসী গন্ধ। ও তো লাল মাটির গাছ। তারপর আমার মনের রঙে কখন যে লিখে ফেললাম লাল পাহাড়ির দেশে যা!’
তিনি জানান, এটি লেখা হয় ১৯৭২ সালে। এরপর ১৯৭৯ সালে এই কবিতা প্রচলিত সুরে ভি বালসারার ব্যবস্থাপনায় সুভাষ চক্রবর্তী রেকর্ড করেন। বাউলদের অনুরোধে আরো দু’টো পংক্তি যোগ করেন তিনি। নতুন পংক্তি দুটিতে সুর করেন কবি নিজেই।
অনেক পরে বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’ এই গানটি রেকর্ড করে। যা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পায়। গীতিকারের নাম উল্লেখ না করায় এ শুরু হয় বিতর্কও। পরে অবশ্য ক্ষমাও চেয়েছিল অরুণ চক্রবর্তীর কাছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ জুলাই কলকাতার রবীন্দ্র সদনে সম্মান জানানো হবে ‘লাল পাহাড়ি’র স্রষ্টা অরুণ চক্রবর্তীকে। ঝুমুর গায়ক সুভাষ চক্রবর্তীকেও সম্মান জানানো হবে একই দিন। উপস্থিত থাকবেন সংগীতজগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
এনএটি/জেআইএম