মৌলভীবাজার: জেলার বড়কাপন এলাকায় পরোক্ষভাবে বিষ মিশিয়ে ১৩টি বিপন্ন প্রজাতির বাংলা শকুন হত্যার ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে মো. রোকন ও কচনু মিয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলাটি করেন মৌলভীবাজার সদর বন্যপ্রাণী রেঞ্জের বর্ষিজোড়া বিটের বিট কর্মকর্তা আবু নাঈম মো. নুরুন্নবী।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত করতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং আইইউসিএনের কর্মকর্তা ও গবেষক দল।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, দায়ের করা মামলায় মো. রোকন ও মজনু মিঞার নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। বন বিভাগ থেকে শকুনের মরদেহ পাওয়া এলাকা থেকে দুটি বিষের বোতলও পাওয়া গেছে। মামলার সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে ওই বোতল দুটি থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, মৃত ১০টি শকুন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কর্মকর্তারা বস্তায় করে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। এগুলো ১০ দিন আগে মারা গেছে বলে ধারণা করছি। সব পচে-গলে গেছে। শকুনগুলোর মৃত্যুর কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিলেট ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছি। ধারণা করছি, মৃত ছাগল কিংবা কুকুর অথবা শিয়াল খেয়ে শকুনগুলো মারা যেতে পারে।
তিনি জানান, অনেক সময় গরুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় এবং কুকুর-শিয়াল নিধনে গ্রামগঞ্জে বিষ জাতীয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এ প্রাণীগুলোর কোনোটি মারা যাওয়ার পর তার মাংস অন্য প্রাণী খেলে, তারাও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহাবিপন্ন বাংলা শকুনগুলোর মরদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ল্যাব টেস্টের পর বুঝতে পারা যাবে আসলে কী কারণে শকুনগুলো মারা গেছে।
জেলার সদর মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, শকুন হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগের অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়েছে।
বন বিভাগ ও আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬০টি শকুন ছিল। এর মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ছিল ৮০টি। এ ১৩টি শকুনের মৃত্যুর পর সংখ্যাটি আরও কমে গেল।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কালারবাজারের কাছে বড়কাপন গ্রামের বুড়িকোনা বিল থেকে বনবিভাগের কর্মকর্তারা ১০টি মৃত শকুন উদ্ধার করেন। পরে দুপুরে সেখান থেকে আরও তিনটি মৃত শকুন উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
বিবিবি/এসআইএ