ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দেশে আমদানির আড়ালে প্রাণী পাচারের অভিযোগ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
দেশে আমদানির আড়ালে প্রাণী পাচারের অভিযোগ!

ঢাকা: বাংলাদেশে পাচারের ক্ষেত্রে টার্গেটে থাকে সব ধরনের বন্যপ্রাণী। বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযান প্রক্রিয়ার সঙ্গে মামলা ও জরিমানাও করে বন বিভাগ।

কিন্তু কোনোভাবে বন্যপ্রাণী পাচার সিন্ডিকেটকে দমানো যাচ্ছে না।

তেমনই একজন এস এ ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী সালেহ আহমেদ সবুজ। বন্যপ্রাণী চোরাচালানে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এস এ ইন্টারন্যাশনালের মালিক সালেহ আহমেদ সবুজের বিরুদ্ধে।

ডোমেস্টিক র‌্যাবিট আনার কথা থাকলেও তিনি বিভিন্ন সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশীয় খরগোশ আর মারা মারা প্রাণী আমদানির আড়ালে আর্জেন্টিনার বিলুপ্ত পাতাগোনিয়ান মারা মারা, ওলাভি র‌্যাবিট ও কেপিবাড়ার মতো আরও অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী নিয়ে এসে ভারতে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয় সেসময়। ২০২০ সালে যে এনওসি নিয়ে অন্য প্রাণী তিনি এনেছিলেন, সে তথ্য বাংলানিউজের কাছে রয়েছে।

অন্যদিকে, বন ভবন থেকে সাইটিস-২ পাখির অনুমোদন নিয়ে সাইটিস-২ বহির্ভূত অনেক বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক ও আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আমদানি করে ভারতে পাচার করেন বলে অভিযোগ আসে।

রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকায় অবস্থিত তার খামার এস এ ইন্টারন্যাশনাল। তবে, সেটি কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই বলে জানা গেছে। অভিযোগ আছে, এই খামারের তথ্য বন্যপ্রাণী অধিদপ্তর জেনে যাওয়ার পর সব দামি বিলুপ্ত প্রাণী তার অন্য খামারে স্থানান্তর করে ফেলেন। ফরিদপুরের মধুখালি থানার রাজধরপুর গ্রামে প্রায় ৩ কোটি টাকার জমি কিনে গড়ে তুলেছেন অবৈধ বিলুপ্ত প্রাণীর খামার, যেখানে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের বিলুপ্ত বিপন্ন প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী চোরাচালানের হোতা হিসেবে তার নাম রয়েছে। কিন্তু বরাবরই তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালেহ আহমেদ সবুজের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায় বাংলানিউজ। পরে, তাকে ক্ষুদে বার্তা দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

দেশে গত বছর এক সংসদ সদস্যের বাগানবাড়ি থেকে ৩টি মুখপোড়া হনুমান জব্দ করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বিপন্ন প্রজাতির এ হনুমান লালন-পালন করা আইনে নিষিদ্ধ। আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেই বাসা, বাড়ি অফিসে প্রদর্শন করে রাখা হচ্ছে বাঘ, সিংহ হরিণের চামড়া এবং হাতির দাঁত, হরিণ এবং গন্ডারের শিং।

মূলত এসব প্রাণী বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবৈধভাবে সংগৃহীত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিথ্যা চালানের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে আনা চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি মালি থেকে ৪টি বিপন্ন প্রজাতির গ্রিভেট বানর আটক করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ফ্রেইট ইউনিট।

এ জাতীয় বানরের একেকটির মূল্য সাড়ে ৪ হাজার ডলার বা তার বেশি। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচার কার্যক্রমের বড় রুট হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। বন্যপ্রাণী চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুটে সরবরাহকারী ও গন্তব্য দুই ভূমিকাই পালনের অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশি চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে। আবার দেশের মধ্যেই তারা গড়ে তুলেছেন বন্যপ্রাণী কেনাবেচার বাজার, যার ক্রেতাদের বড় অংশ হলো অভিজাতরা।

বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের জন্য নিয়মিত ব্যবহৃত হয় এমন রুটগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা থেকে নানা বৈচিত্র্যময় প্রাণী—লামা, পুডু, ক্যাপুচিন বানর থেকে শুরু করে সিংহ, চিতাবাঘ, জেব্রা পর্যন্ত আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই আন্তঃসীমান্ত বন্দরগুলোতে স্রোতের মতো চোরাচালান হয়ে আসছে। ব্যবসায়ীরা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের জ্ঞানের অভাবকে কাজে লাগিয়ে এ অপকর্ম করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩

এমকে/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।