ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বানর ‘ঘাস’ খায়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
বানর ‘ঘাস’ খায় ঘাসের ডাটার মতো অংশটি খাচ্ছে বানর। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: কিছুটা চমকে ওঠার মতোই কথা! সেই সাথে বিস্ময় দানাবাঁধে মনে, বানর কি আর গরু বা ঘোড়া মতো ঘাস খাবে? কিন্তু ছবি বলছে অন্য কথা। সব চমকে ওঠা বিস্ময়কে স্বাভাবিক করে দিয়ে ছবি সরলভাবে জানান দিচ্ছে, বানর  ‘ঘাস’ খায়।

 এ ছবিগুলো আগে নয়, আজই তোলা। চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল থেকে। ঘটনার স্থান চা-বাগানের একটি পরিত্যক্ত বিলে। বিলের এক কোণে শুকনো একটুকরো জায়গায় বড় বড় ঘাসের সারি। এখানেই দলগত বানররা হঠাৎ নেমে পড়েছে ঘাস খেতে।
  
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে এই ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক দৃশ্যে হৃদয় ভরে গেলও। ‘রেসাস ম্যাকাক’ নামের প্রাণীগুলো সদলবলে শুকনো জলাভূমিতে নেমে খাবার ভক্ষণ করছে। বড় বড় ঘাসগুলোর নিচের অংশ হাত দিয়ে ছিঁড়ে মুখে পুড়ে দিচ্ছে। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে তৃণখাদ্যপর্ব সম্পন্ন করছে। কিন্তু না, এখানেই শেষ নয়। তাদের এই বিশেষ খাবারপর্বটি কেউ প্রত্যক্ষ করুক এটাতে বোধ হয় তাদের চরম আপত্তি। অথবা এমনও হতে পারে তাদের টেরিটরিতে (সুনির্দিষ্ট এলাকা) অন্য কারো উপস্থিতি বা প্রবেশাধিকার কখনোই ওরা প্রত্যাশা করে না। ফলে একটু পর পরই আপত্তিসূচক ধ্বনির ভেতর থেকে জমে থাকা রাগান্বিতভাব প্রকাশিত হতে থাকলো।  

অবশ্য এটা সব বানরের থেকে নয়, শুধু দলপ্রধান পুরুষ বানরটার পক্ষ থেকে। সে বানরদলের প্রধান বলে তার দায়িত্বও তুলনামূলক অনেক বেশি। শৌর্যবীর্য বা বীরত্ব প্রদর্শন করার ক্ষমতাও বেশি। ফলে জায়গা মতো তার এই হুংকারগুলো বা মৃদু গর্জনগুলো আতংক ছড়ানোর চেষ্টা করলো।  
যাতে অপ্রত্যাশিত আগন্তুক দূরে সরে যায়। তাদের চোখের আড়াল হয়ে যায়।  

এদিকে ছোট-বড় সব বানরগুলোকেইওই শুষ্ক বিলের ঘাসময় সমতলে নেমে সকালের প্রাতরাশপর্ব শেষ করতে দেখা গেল। আরও দেখা গেলো, সম্ভবত দলপ্রধান চিৎকার করে প্রাতরাশ সমাপ্তের ঘোষণা দিলো এবং নিজে পার্শ্ববর্তী গাছের ওপরে চলে এলো। ব্যস, এমনি দলের অন্যান্য বানরগুলোও খাদ্যগ্রহণপর্ব শেষ করে পেছন পেছনে গাছের ওপরে চলে এলো। দলপ্রধানের নেতৃত্বের প্রতি দলের অন্যান্য বানরদের অসাধারণ সম্মতি জ্ঞাপনসূচক আজ্ঞা পালনের কী অপূর্ব নির্দেশনা। খাদ্যগ্রহণ সমাপ্তির ঘোষণা আসা মাত্রই তা পালন করার জন্য বাধ্য হলো সবাই।  

এই বানরগুলোকে ‘বান্দর’, ‘লাল বান্দর’ বা ‘কোটা বানর’ এই নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এদের ইংরেজি নাম ‘রেসাস ম্যাকাক’।  এরা দিবাচর প্রাণী। দিনের বেলায় খাবারের সন্ধানে এরা মাটিতে এবং গাছে দলগতভাবে চড়ে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, ফুল, বিভিন্ন ধরনের পাতা, শস্যদানা, শিকড় প্রভৃতি। এছাড়া মেরুদণ্ডী এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীও তাদের খাবারের অংশ।

বানর কি খাস খায়, এমন আলোচনার এক ফাঁকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, হ্যাঁ, বানরও ঘাস খেয়ে থাকে। তবে সেটা গরুর মতো ঘাস খাওয়া নয়। এই ঘাস খাওয়া হলো বিশেষ প্রজাতির বড় আকৃতির ঘাস। সেই ঘাসের নরম-কচি মূলটুকুই ওরা চিবিয়ে খায়।      

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।