বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক (শ্রীপুর, গাজীপুর) ঘুরে এসে: আপনি বসে আছেন বাস নামক চলন্ত খাঁচায়, আর উন্মুক্ত উদ্যানে ঘুরছে বাঘ, ভালুক, চিতাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। ভাগ্য ভালো হলে হয়তো বাঘ বাসের সামনে এসে আপনাকে কাছ থেকে ছবি তোলার জন্য সুযোগ করে দিতে পারে।
ছোট ছোট টিলা আর বিস্তৃত শালবন। কৃত্রিম লেকের ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ। তিন হাজার ৬৯০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই সাফারি পার্ক। থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের অনুকরণে ২০১৩ সালে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে সাফারি পার্ক গড়ে তোলা হয়।
সাফারি পার্কের প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা, তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এছাড়া সাধারণ অথবা শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের পার্কে প্রবেশ করতে ১০ টাকা লাগে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড দেখাতে হবে। বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে প্রবেশ মূল্য এক হাজার টাকা।
টিকিট কেটে মূল গেইটের ভেতরে প্রবেশ করতেই সবার আগে চোখে পড়ে সাফারি পার্কের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কোর সাফারি। ভেতরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, সাফারি কিংডম, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক নামে চারটি অংশ।
কোর সাফারিতে গাড়ি ছাড়া কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারেন না। এর জন্য রয়েছে কিছু ভালো মানের টুরিস্ট মিনিবাস। এই টুরিস্ট বাসে চড়েই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণরত বন্যপ্রাণী দেখা যায়।
কোর সাফারি এক হাজার ৩৩৫ একর এলাকা নিয়ে তৈরি। এখানে বাঘ, সিংহ, কৃষ্ণকায় ভালুক, আফ্রিকান চিতার পাশাপাশি চিত্রা হরিণ, গয়াল, হাতি, মায়া ও প্যারা হরিণ, জিরাফ, জেব্রাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নানা ধরনের প্রাণী রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে সাদা কালো দুটি ক্ষুদ্রাকার ঘোড়া, কুমির, জলহস্তী, বড় আকৃতির শকুন, মান্ডারিং ডাক, ক্রাউনড ক্রেইন ইত্যাদি।
সেজন্য এই পার্কের কোর সাফারিতেই পর্যটকদের সবচেয়ে বড় লাইন থাকে। কোর সাফারি পার্ক ঘুরতে ২০ মিনিট সময় লাগে। এখানে প্রবেশমূল্য ১৫০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য লাগে ৫০ টাকা।
কোর সাফারি ভ্রমণ শেষে রাজধানীর জুরাইন থেকে আগত এনামুল হক নিপু বলেন, আমরা বাঘ, সিংহ ও জেব্রা খুব কাছ থেকে দেখেছি। বাঘ তো আমাদের বাসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বাসে বন্দি থেকে এত কাছ থেকে অবমুক্ত বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ পেয়ে আমার পরিবারসহ বাসে যারা ছিল, সবাই খুবই খুশি।
কোর সাফারি শেষ করে সামনে এগুলেই সাফারি কিংডম। শুরুতেই শোনা যাবে পাখির কিচির-মিচির। এখানে রয়েছে আফ্রিকা থেকে আনা প্রায় ৩৪ প্রজাতির বিভিন্ন রকম পাখি। রয়েছে সুন্দর সুন্দর রঙের ম্যাকাও পাখি। আপনি ডাক দিলেই উড়ে এসে আপনার মাথায় কিংবা ঘাড়ে এসে বসবে রঙিন ম্যাকাও।
এই কিংডমে রয়েছে তিনটি পাখিশালা, প্রজাপতি সাফারি, অর্কিড হাউজ, জিরাফ ফিডিং স্পট, শকুন ও পেঁচা কর্নার, ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন, এগ ওয়ার্ল্ড। এছাড়া রয়েছে বোটিং, লেইক জোন, আইল্যান্ড ও প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র।
শিশুদের আকর্ষণের মেরিন অ্যাকোয়ারিয়ামও রয়েছে এখানে। যার মধ্যে আছে টাইগার ফিশ, ক্রোকোডিল, অস্কার, ব্ল্যাক গোস্ট এবং কয়েক সেকেন্ডে রং পরিবর্তনকারী সিকলিড মাছ।
এছাড়া পার্কের পথে পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় দুষ্ট বানরের দলকে। যা সাফারি পার্কের ঘোরাঘুরিকে করে আরও আনন্দময়।
ট্যুরিস্ট বাসের পাশাপাশি সিংহ ও বাঘ দেখার জন্য দুটি রেস্তোরাঁও রয়েছে সাফারি পার্কে। যেখানে খাবার টেবিলে বসেই কাচের অন্য পাশে সিংহ কিংবা বাঘের উন্মুক্ত চলাফেরা দেখা যাবে।
পার্কে রয়েছে বিশাল বড় দুটি হাতি। এই হাতির পিঠে চড়ে খানিকটা পথ দোল খেতে পারবেন। বিনিময়ে একজনকে দিতে হবে ৩০ টাকা।
পশুপাখি ও জীব-জন্তুর যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য সাফারি পার্কের ভেতরে গান-বাজনাসহ সব ধরনের বনভোজনে নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু সাফারি পার্কের বাইরে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। অনেকে পিকনিক স্পটগুলোতে ঘোরার পাশাপাশি সাফারি পার্কে বেড়িয়ে আসেন।
এ পার্কের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে রয়েছে আকর্ষণীয় ম্যুরাল এবং সজ্জিত ফোয়ারা ও লেক। প্রশাসনিক ভবনগুলোর পাশাপাশি আরও রয়েছে ডিসপ্লে ম্যাপ, পার্ক অফিস, তথ্যকেন্দ্র, বিশ্রামাগার, ডরমেটরি, ন্যাচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ইকো-রিসোর্ট ইত্যাদি।
যে পথে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
রাজধানী থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গেলে বাঘের বাজার। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রধান প্রবেশদ্বার, যার দুই পাশে দুটি মূর্তির হাতি অভ্যর্থনা জানাবে।
প্রতি মঙ্গলবার সাফারি পার্ক সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি খোলা থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
এইচএ/