ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

২৩ বছরেও ‘রাষ্ট্রীয়’ স্বীকৃতি পায়নি সুন্দরবন দিবস

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
২৩ বছরেও ‘রাষ্ট্রীয়’ স্বীকৃতি পায়নি সুন্দরবন দিবস

খুলনা: ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কিন্তু সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের প্রান্তিক মানুষরা এ দিনটিতে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে উদযাপন করেন।

কিন্তু এখনও দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের স্বীকৃতি পায়নি।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় খুলনাসহ উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিনটি উদযাপন হয়ে আসছে। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। সেই হিসেবে এবার উদযাপিত হচ্ছে ২৩তম সুন্দরবন দিবস। প্রতিবারের মতো এবারেও সুন্দরবন দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হবে খুলনায়। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য ‘সুন্দরবন দিবস’ রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা জরুরি। কিন্তু ২৩ বছরেও দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের স্বীকৃতি পায়নি। এ কারণে ক্ষোভ বিরাজ করছে সুন্দরবন গবেষক, উন্নয়ন সংগঠন এবং পরিবেশবাদীদের মধ্যে।

তারা বলছেন, সুন্দরবন নিয়ে মৌলিক গবেষণা প্রয়োজন। সুন্দরবন সুরক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা আরও শক্তিশালী করতে হবে। সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা প্ল্যানকে যুগোপযোগী করতে হবে।

একশ বছরের পুরোনো প্ল্যান দিয়ে যথাযথভাবে সুন্দরবন সুরক্ষা হবে না। সুন্দরবনকে সার্বজনীন ভালোবাসার বস্তুতে পরিণত করতে হবে। এ জন্য সুন্দরবন দিবসের সরকারি স্বীকৃতি দরকার। আর এ দাবি পূরণ করতে জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছার প্রয়োজন। উপকূলের প্রান্তিক মানুষেরও দাবি সুন্দরবন দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাক।

সুন্দরবন সংলগ্ন মহারাজপুর ইউনিয়নের অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সুন্দরবনকে ধ্বংস করার জন্য মুনাফাখোররা বিষ দিয়ে মাছ ধরছেন, হরিণ শিকার করছেন। আমরা সুন্দরবন দিবসে স্থানীয় বাসিন্দাদের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করতে চাই। সেইসঙ্গে সুন্দরবন দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি করছি।

সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, জগদ্বিখ্যাত সুন্দরবনের অধিকারী হওয়ায় বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আগলে রেখেছে সুন্দরবন। অনেকটা মায়ের কোলে একটি শিশু যেমন পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে, তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক বিরাট এলাকা সুন্দরবনকে অবলম্বন করে নিরাপদ আছে। সুন্দরবন একাডেমির পরিচালিত সুন্দরবন দিবস উদযাপনের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন, খুলনা প্রেসক্লাব, সুন্দরবন সংলগ্ন সাংবাদিক সমাজ এবং প্রকৃতিপ্রেমীরা।

তিনি আরও বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে দুই দশকের বেশি সময় ধরে দাবি জানিয়ে এলেও সেটি পূরণ হয়নি। এখনও সুন্দরবন দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব স্বীকৃতি দেওয়ার। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তা সম্ভব। এটি বাস্তবায়ন হলে সারা দেশের মানুষ সুন্দরবন নিয়ে অন্তত একদিন ভাবতো, সরকার নানা পদক্ষেপ নিত। আরও বেশি সুরক্ষিত থাকতো সুন্দরবন।

খুবির ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় একক ম্যানগ্রোভ বন। প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আড়ালে অনেকটা হারিয়ে গেলেও এদিন ‘সুন্দরবন দিবস’ উপদযাপন করেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। সুন্দরবনের প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকে দিবসটি উপযাপন করা হয়। এ দিবসটি সরকারিভাবে উপযাপনের জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহল ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দাবি জানিয়ে আসছে সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠানসহ পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠনগুলো। কিন্তু তাদের সে দাবি আজও পূরণ হয়নি। এখন সময় এসেছে দাবি পূরণের।

খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবন দিবসে বন বিভাগের কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান নেই। তবে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সুন্দরবন দিবসে যেসব অনুষ্ঠান বা কর্মসূচি হয় তাতে আমরা অংশগ্রহণ করি।

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. রশীদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সংসদ অধিবেশন চলছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি যাতে সুন্দরবন দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা পায় সেই বিষয়ে আমি জোর দাবি জানাবো।

সুন্দরবন দিবসের কর্মসূচি:
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসার আহ্বান জানিয়ে এবারেও সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় উদযাপিত হবে সুন্দরবন দিবস। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি উদযাপিত হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওইদিন সকাল ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনা প্রেসক্লাব ও সুন্দরবন একাডেমির যৌথ উদ্যোগে এবারে খুলনায় কেন্দ্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘প্লাস্টিক ও পলিথিনমুক্ত সুন্দরবনের জনপদ’।

এছাড়া বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনায় এবং উপজেলা পর্যায়ে দাকোপ, আশাশুনি, শ্যামনগর, মোংলা, শরণখোলায় দিবসটি উদযাপিত হবে। ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন-টোয়াস খুলনা মহানগরের লায়ন্স স্কুল মিলনায়তনে সুন্দরবনবিষয়ক চিত্রাঙ্কন এবং রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী এবং খুলনা সাইক্লিং কমিউনিটি এ দিবসটি উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য বাইসাইকেল র‌্যালির আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
এমআরএম/এএটি/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।