ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বছর গড়ালেও চালু হয়নি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ মেগাপ্রজেক্ট

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১২
বছর গড়ালেও চালু হয়নি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ মেগাপ্রজেক্ট

ঢাকা: বিশ্বব্যাংকের সিংহভাগ অর্থায়নে দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ৬ বছরব্যাপী মেগা প্রজেক্টের এক বছর অতিবাহিত হলো কেবল কনসালট্যান্ট নিয়োগ ও প্রকিউরমেন্টের কাজ করতেই!

বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন বনবিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন “স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন প্রজেক্ট” (এসআরসিডব্লিউপি) নামে এই প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু করে ২০১১ সালের জুনে।

বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যরোধ, আবাসস্থল সুরক্ষা, মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘাত হ্রাস, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান জোরদারকরণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত এসবের কিছুই শুরু হয়নি এ প্রকল্পে।



ঠিক কবে থেকে মাঠ পর্যায়ে এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে তাও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না প্রকল্প কর্তারা। ফলে বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট মহলে এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সংশয় দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগজনকহারে বন্যপ্রাণী শিকার ও অবৈধ বাণিজ্য বেড়ে গেছে। অতি সম্প্রতি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জিনতলা এলাকার বিষখালী নদী থেকে ৩৫০ কেজি হরিণের মাংস, একটি জীবিত হরিণসহ একটি ট্রলার উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। রাজধানী থেকে র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয় বাঘের বাচ্চা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য রোধে সংশ্লিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও বনবিভাগের কোন পদক্ষেপ নিতে না পারা মোটেও শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। এটি পরোক্ষভাবে চোরাকারবারিদের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতাকেই প্রমাণ করে।

স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক বনসংরক্ষক ড. তপন কুমার দে বাংলানিউজকে বলেন, “দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। আমরা এখনও প্রকিউরমেন্টের কাজ করছি। তাই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। ”

তবে এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে কতোদিন লাগবে তা নিশ্চিত করতে ন‍া পারলেও তিনি বলেন, “প্রকল্পের পুরো প্রক্রিয়াটি আমরা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে করতে চাই। প্রকল্পের অর্থায়নে এরইমধ্যে বাঘ গণনার আধুনিক যন্ত্র আনা হয়েছে, টহল বৃদ্ধির জন্য আধুনিক ট্রলার কেনা হয়েছে। বন্যপ্রাণী রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে পোস্টার ও বুকলেট তৈরি করা হচ্ছে। একই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাখি বিক্রেতা, সাঁপুড়েসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কর্মশালার আয়োজন করছি। ”

ড. তপন কুমার দে বলেন, “ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন প্রজেক্টের জন্য ৩০ জন কর্মকর্তা ও ৩৫ জন স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের প্রশিক্ষণের মাধমে দক্ষ করে তোলা হবে। ”

বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য ঠেকাতে বন বিভাগ কেন ভূমিকা রাখতে পারছে না-এমন প্রশ্নের জাবাবে কিছুটা দায় স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে আরও প্রো-অ্যাকটিভ হওয়া উচিৎ|”

তবে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত নতুন আইনের গেজেট প্রকাশিত হলেই এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে বলেও মত এ বন কর্মকর্তা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর বিপন্নতার বিষয়টি এখনও আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছি না। সংকটটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্লেষিত হচ্ছে না। পুরো জীববৈচিত্র ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলেই কেবল বন্যপ্রাণী সুরক্ষা পাবে। ”

সম্প্রতি ব্যক্তি উদ্যোগে হরিণ প্রতিপালনের আইন অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি হরিণ তথা বন্যপ্রাণী নিধনকে পরোক্ষভাবে আরও উৎসাহিত করবে। কারণ, কোনটি বনের হরিণ আর কোনটি ব্যক্তি খামারের হরিণ তা নির্ণয় করা কঠিন হবে। ”

বাস্তবায়নাধীন এসআরসিডব্লিউপি প্রকল্প প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “এসব মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিৎ, সেটি বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে কিনা। দক্ষতা অর্জনের পরই এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিৎ, অন্যথায় অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিৎ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ”

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জুনে শুরু হওয়া এসআরসিডব্লিউপি প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান ও ভারতও এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ২৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশে এ প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১২
এআই/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।