ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দূষণে-দখলে ‘সংকটাপন্ন’ ঢাকার অধিকাংশ পুকুর

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
দূষণে-দখলে ‘সংকটাপন্ন’ ঢাকার অধিকাংশ পুকুর অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ পুকুরের পানি দূষিত। এছাড়া পাড় দখল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ পুকুরের অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।

 

ঢাকা শহরের আটটি পুকুর নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাকক্ষে ‘স্থানীয় পর্যায়ে শহুরে পুকুর ব্যবস্থাপনা ও অংশীজনদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা এ তথ্য তুলে ধরেন।

বিভাগের লেভেল-৪, টার্ম-২–এর শিক্ষার্থীরা আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ঢাকার আটটি পুকুরে এ গবেষণা চালান।

পুকুরগুলো হলো এলেনবাড়ি পুকুর, লালমাটিয়া বিবি মসজিদ পুকুর, বংশাল পুকুর, টিকাটুলি এনটিআরএস পুকুর, সিক্কাটুলি পুকুর, আলুবাজার পুকুর, গোল তালাব পুকুর এবং কালীবাড়ি পুকুর।

আলোচনায় উঠে আসে, মালিকানা সমস্যা থাকায় পুকুরগুলো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। যদিও এসব পুকুর মোগল ও ব্রিটিশ আমল থেকে স্থানীয় মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে। এমনকি বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডে এসব পুকুরের পানি আগুন নেভাতে ভূমিকা রেখেছে। পুকুরগুলো এখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের কার্যক্রমের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

শিক্ষার্থী আহমেদ ফারওয়া মাহরাফ সিদ্দিকী, অনিকা তাসনিম ও মিমোসা আহমেদের প্রাপ্ত গবেষণায় দেখা যায়, আলুবাজার পুকুরে বর্জ্যদূষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। বংশাল পুকুরে পাড় দখল ও গাছপালা না থাকায় স্থানীয় লোকজনও স্বেচ্ছায় পুকুর রক্ষার কমিটিতে থাকতে চান না। গোল তালাব পুকুরের পাড়ে অবৈধ পার্কিংসহ সব সময় মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

এ ছাড়া সিক্কাটুলি পুকুরে বর্জ্যদূষণের সঙ্গে রয়েছে মালিকানা সমস্যা। টিকাটুলি পুকুরে পানিদূষণের পাশাপাশি চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। এলেনবাড়ি পুকুরের পানিও অপরিষ্কার। কালীবাড়ি পুকুরের পাড় ভেঙে যাচ্ছে, পানিও দূষিত। আর লালমাটিয়া বিবির মসজিদ পুকুরে দূষিত পানির সঙ্গে রয়েছে মশা ও কীটপতঙ্গ।

গবেষণায় সমস্যা সমাধানকল্পে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনগণকে পুকুর ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেন। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রস্তাব দেন।  

এ ছাড়া সুপারিশে পুকুরপাড়ে মানুষের বসার কিংবা হাঁটার ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাড়ে আলোর ব্যবস্থা করা, বর্জ্য ফেলা বন্ধ, প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা এবং পুকুরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মসূচি আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।  

শিক্ষার্থীদের দেওয়া এসব সুপারিশের বাইরে কর্মশালায় অংশ নেওয়া অংশীজনদের আলোচনায় আরও কিছু প্রস্তাব উঠে আসে। প্রস্তাবনার মধ্যে পুকুরগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, শোভাবর্ধন, পয়োবর্জ্যের নালা এবং অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) অপসারণের বিষয়গুলো উঠে আসে। পাশাপাশি পুকুরে মাছ ধরা, সাঁতার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানুষকে পুকুরকেন্দ্রিক কাজে উৎসাহী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মালিকানা নিয়ে জটিলতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষের সাহায্য চাওয়া হয়।

কর্মশালায় উপস্থিত রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, পুকুর রক্ষায় আন্দোলন-সংগ্রাম তেমন একটা নেই। ফলে বিভিন্ন সময় পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও পুকুর ভরাট করে স্থাপনা করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরও তাদের ভবনের সামনের পুকুর ভরাট করে ফুলের বাগান করেছে। যেখানে যেখানে পুকুর রয়েছে, সেখানে সরকারিভাবে ‘পুকুর ভরাট করা যাবে না’ লেখা–সংবলিত সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া উচিত।

রাজউকের উপনগর পরিকল্পনাবিদ নবায়ন খীসা বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হয়েছে। যেখানে ৫৫টি খাসপুকুর হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় রাজউক পুকুর সংরক্ষণ–সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। রাজউক এসব পুকুর রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন করে জনপরিসর হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত করবে। এভাবে পুকুর দখল থেকে রক্ষা করা যাবে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম। এ সময় গবেষণা চালানো পুকুরগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।