লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কে প্রতিনিয়ত উড়ছে ধুলোবালি। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের খামখেয়ালিপনায় মহাসড়কে এমন বায়ু দূষণ হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সড়কের বায়ু দূষণ রোধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। পরিবেশ অধিদপ্তরও দোষ চাপাচ্ছেন সড়ক বিভাগের ওপর।
স্থানীয়রা জানায়, সড়কে চলাচলকৃত বালুবাহী ড্রাম ট্রাক থেকে বালু পড়ছে সড়কে। এতে অন্যান্য যানবাহন চলাচলের সময় ধুলোবালি উড়ছে। সেই বালু পড়ছে পথচারীদের চোখে-মুখে।
এদিকে ওই সড়ক দিয়েই ট্রলি কিংবা পিকআপভ্যানে করে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি ও ইট পরিবহন করা হয়। এসময়ও সড়কে মাটি পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলোবালি।
সড়ক ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং বাস টার্মিনাল থেকে দালাল বাজার অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। এসব অংশে সড়কের কার্পেটিং এবং মেকাডম উঠে গিয়ে ধুলোবালি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সড়কে যেসব গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো ভরাটের জন্য ইটের সলিং করা হচ্ছে। সলিংয়ের জন্য ব্যবহার হচ্ছে বালু। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলের সময় বালুগুলো উড়াউড়ি করে। এসব বালু গিয়ে পড়ে লোকজনের চোখে-মুখে। আর ধুলোবালুতে সড়কের পাশে থাকা গাছপালাও বিবর্ণ হয়ে গেছে।
স্থানীয় সাংবাদিক হাসান মাহমুদ শাকিল বলেন, লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রচুর বালু। অনিয়ন্ত্রিত বালু ও ইটবাহী ট্রাক-পিকআপভ্যান ও ট্রাক্টর এর প্রধান কারণ। এছাড়া পিচঢালা সড়কে সড়ক ও জনপথ বিভাগের করা সলিং আরও বেশি বালু বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বালুর কারণে মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জকসিন, মান্দারী, মজুচৌধুরীরহাট বাসটার্মিনাল, উত্তর তেমুহনী এলাকায় গেলে বালুতে একাকার হয়ে যেতে হয়। এসব এলাকা থেকে ফিরে গোসল বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।
সদর উপজেলার মান্দারী এলাকার বাসিন্দা আজাদ হোসেন বলেন, সড়কে ধুলোবালির কারণে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত এ সড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের চাকার সঙ্গে বালু উঠে সড়ক এবং আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। সড়কের পাশে থাকা গাছপালাও বালুতে বিবর্ণ রং ধারণ করেছে।
মান্দারীর যাদৈয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম বলেন, সড়ক বিভাগ সড়ক সংস্কার করছে ইট-বালু দিয়ে। বালু দেওয়ার কারণে সড়কে আরও বেশি ধুলোবালি সৃষ্টি হয়েছে।
বাঙাখাঁ এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, সড়ক দিয়ে চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মোটরসাইকেল চালানোর সময় ধুলোবালি গায়ে এসে পড়ে। চোখ জ্বালাপোড়া করে। সর্দি-কাশি দেখা দেয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শিশুদের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও নারী-পুরুষসহ শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।
মাহমুদুল হাসান নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, সড়কে বালু দিয়ে ইটের সলিং করা হচ্ছে। এতে ধুলোবালির পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে আমাদের ভোগান্তি বেড়েছে। বালুর কারণে পরনের জামাকাপড় নষ্ট হয়। ধুলোতে শ্বাস নেওয়া যায় না। এটা স্বাস্থ্যের জন্যেও খুবই ক্ষতিকর।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরূপ পাল বলেন, বায়ু দূষণের কারণে মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হয়। বিশেষ করে অ্যাজমা, সর্দি, কাশিসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। শিশুদের জন্যেও মারাত্মক ক্ষতিকর।
লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে বায়ু দূষণ ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেখার কথা।
এ বিষয়ে জানতে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (রামগঞ্জ) মো. আমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বালু দিয়ে ইটের সলিং করতে হয়। আস্তে আস্তে বালু ইটের ভেতরে বসে গেলে দূষণ কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
আরএ