ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ জুলাই ২০২৫, ২৮ মহররম ১৪৪৭

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জলবায়ু দায়বদ্ধতা পালনে উন্নত দেশের প্রতি আহ্বান সৈয়দা রিজওয়ানার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২০, জুলাই ২৩, ২০২৫
জলবায়ু দায়বদ্ধতা পালনে উন্নত দেশের প্রতি আহ্বান সৈয়দা রিজওয়ানার ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

বৈশ্বিক অংশীজনদের প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান গ্রহণে এবং উন্নত দেশগুলোকে যথাযথভাবে তাদের জলবায়ু দায়বদ্ধতা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  

বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে ‘জলবায়ু পরিবর্তনে সম্প্রদায় ও বাস্তুতন্ত্রের সহনশীলতা বৃদ্ধি’ প্রতিপাদ্যে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত মেঘনা নলেজ ফোরামে ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।


 
তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নয়ন ভাবনাকে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। এটি কম প্রতিকূল, কম সম্পদ-কেন্দ্রিক এবং আরও বেশি প্রকৃতিকেন্দ্রিক হতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের নদী এবং জাতীয় পরিচয়ের গভীর সম্পর্ক তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নদীর দেশ বললে ভুল হবে না। নদী ও নদীর পরিবেশ আমাদের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তিনি প্রতিবেশী দেশ—নেপাল, ভারত ও চীনের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনায় আরও জোরালো আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।  

উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের চারটি প্রধান নদী অববাহিকা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করা—ফলে সহযোগিতামূলক পরিবেশ শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

তার বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ‘নদীর অধিকার’ সংক্রান্ত আলোচনা।  

তিনি বলেন, আমাদের নদীগুলোকে শুধু নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নয়, বরং তাদের নিজস্ব অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েও রক্ষা করা উচিত।

তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিচারব্যবস্থা ইতোমধ্যে নদীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতেও এ বিষয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।

সৈয়দা রিজওয়ানা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বিশেষ ভৌগোলিক ও পরিবেশগত অঞ্চল হাওর সম্পর্কে বলেন, হাওর বাংলাদেশের একটি অনন্য প্রতিবেশব্যবস্থা।

কৃষি, মাছ চাষ, পর্যটন, এবং পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে হাওর অঞ্চলের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন তিনি। তবে হাওর ও মেঘনা অববাহিকা আজ পরিবেশ দূষণ, বালু উত্তোলন, অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন ও ঘন ঘন আকস্মিক বন্যার হুমকির মুখে রয়েছে বলে উপদেষ্টা সতর্ক করেন।  

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থা না থাকার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি এবং এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার যুবসমাজকে তথ্যপ্রবাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদী ও হ্রদ সুরক্ষা সংক্রান্ত কনভেনশনে সম্পৃক্ত হয়েছে, যা এই অঞ্চলে পরিবেশ নেতৃত্বের অন্যতম দৃষ্টান্ত। তবে আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক এখনো নদী বিষয়টিকে বহুপাক্ষিক নয়, বরং দ্বিপক্ষীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে—যা আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্যের শেষে উপদেষ্টা বলেন, যখন সরকারগুলো পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তখন এ ধরনের ফোরামগুলোতে কমিউনিটির কণ্ঠস্বর এবং জ্ঞানকে প্রাধান্য দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সহযোগিতাই জলবায়ু সহনশীলতার পথ।

এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।