ঢাকা: অবশেষে সুস্থ হয়ে আপন ভুবন আকাশেই উড়ে গেলো সোমবার দুপুরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা ভুবনচিলের ছানাটি।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে চিল ছানা।
সোমবার দুপুরে একঝাঁক কাক বিপদগ্রস্তের তালিকায় থাকা ভুবন চিলের ছানাটিকে আক্রমণ করে মাটিতে ফেলে দেয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় ছানাটিকে উদ্ধার করে ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন বাংলানউজের ডেপুটি চিফ ফটো জার্নালিস্ট নাজমুল হাসান ও স্টাফ ফটো জার্নালিস্ট জাহিদ সায়মন।
এর পর থেকে নিজ বাসায় নিয়ে পরম মমতায় পাখিটিকে শুশ্রুষা দেন নাজমুল হাসান।
সোমবার বিকেলে খাবার হিসেবে কাঁচা গরুর মাংস খেতে দেওয়ার পর অনেকটাই সতেজ হয়ে উঠে পাখিটি । চোখ মেলে তাকাতে থাকে আশপাশে-নির্জিবতা কাটিয়ে নিজস্ব ভঙ্গিমায় উঠে বসে সে।
তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে না উঠায় এবং প্রাণী চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র শেষ না হওয়ায় পাখিটি আলোকচিত্রী নাজমুল হাসান নিজ বাসাতেই রেখে দেন।
পেশাগত কাজ শেষে সোমবার রাত ৮টার দিকে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে পাখিটিকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে মগবাজারের বাসায় নিয়ে যান।
এদিকে, বাংলানিউজে এ সংক্রান্ত খবর পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও ওয়ার্ল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ড. আনোয়ারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সভাপতি নিসর্গপ্রেমী ইনাম আল হক বাংলানউজকে নিশ্চিত করেছেন, উদ্ধারকৃত পাখিটি ভুবন চিলই।
তারা দু’জনেই পাখিটিকে স্বেচ্ছায় উড়ে যেতে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন। শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পাখি ছানাটিকে কাঁচা মাছ, মাংস, সিদ্ধ ডিম খেতে দেওয়ার অনুরোধও জানান তারা।
তথ্যমতে, ভুবন চিলের বৈজ্ঞানিক নাম-Milvus migrans, (ইংরেজি নাম Black Kite। এটি Accipitridae (অ্যাক্সিপিট্রিডি) গোত্রের সদস্য।
ভুবন চিলের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ পরিযায়ী চিল।
মুক্তবিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, দুই মেরু আর দুই আমেরিকা মহাদেশ বাদে প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়ে এদের বিস্তৃতি। এরা বিগত কয়েক বছরে কি হারে কমছে বা বাড়ছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি।
পৃথিবীতে মোট ভুবন চিলের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ বলে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল তাদের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। প্রাণিবিজ্ঞানীরা পাখিটিকে বিপদগ্রস্ত পাখির তালিকায় রেখেছেন।
ভুবন চিল লম্বা চেরা লেজওয়ালা কালচে-বাদামি মাঝারি আকারের শিকারী পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৬১ সেন্টিমিটার, ডানা ৪৩.৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৩.৬ সেন্টিমিটার, পা ৫.২ সেন্টিমিটার ও লেজ ২৬.৫ সেন্টিমিটার।
পুরুষ চিলের ওজন ৬৩০-৯৩০ গ্রাম এবং স্ত্রী পাখির ওজন ৭৫০-৯৪০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। তবে স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় একটু বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ স্পষ্ট গাঢ় লালচে-বাদামি। পিঠ কালচে লাল-বাদামি। ডানার উপরের অংশের মধ্য-ঢাকনি বরাবর ফিকে বাদামি রঙের ফিতা থাকে।
খোলা বিস্তীর্ন এলাকা ভুবন চিলের প্রিয় এলাকা। এছাড়া ঘন বন, পাতলা বন, পার্বত্য অঞ্চল, নদীর পাড়, বেলাভূমি, বন প্রান্ত, ঘাসবন, সাভানা প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়া বড় বড় বন্দর, শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলেও দেখা যায়।
ভুবন চিল সুযোগসন্ধানী শিকারি পাখি। পানির আশেপাশে আবাস হলে মাছই এদের প্রধান শিকার হয়।
অনেকসময় এরা মৃত বা রুগ্ন মাছও খায়। আহত, মৃত বা অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি, স্তন্যপায়ী, ব্যাঙ, সরীসৃপ ও পোকামাকড়ও খায়। অন্য ভুবন চিল, পাখি বা প্রাণীর কাছ থেকে এরা খাবার ছিনিয়ে খায়।
পাখিদের মধ্যে কাকের সঙ্গে এদের তীব্র বিরোধ। সেজন্যই হয়তো সোমবার ভুবন চিলছানাটিকে একা পেয়ে কাকের দল মিলিতভাবে আক্রমন করে মাটিতে ফেলে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৩
এআই/জেডএম