গোয়ালন্দ (রাজবাড়ি) যাত্রীবাহী বাস থেকে: উপকূলের মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখতে উপকূলের কাছাকাছি যেতে হয়নি। রাজবাড়ির গোয়ালন্দ ঘাটেই হাজারো রাজধানীমুখী মানুষের ভোগান্তির চিত্রেই তা সুনজরে আসে।
ঈদের ছুটি কাটিয়ে উপকূল ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষগুলো ফিরছিলেন কর্মস্থলে। দৌলতদিয়া ঘাটের সুদীর্ঘ যানজট নারী-পুরুষ ও শিশুদের চরম ভোগান্তির মুখোমুখি করে।
উপকূলীয় জেলাশহর সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতার তথ্য সংগ্রহে যাওয়ার পথে রোববার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছেই দীর্ঘ যানজট আর লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠার অপেক্ষার দৃশ্য সরেজমিনে চোখে পড়ে। কখন যানজট পেরিয়ে বাসটি ঘাটে ঠাই পাবে, কখন ফিরবে গন্তব্যে, সেই অপেক্ষা সবার।
দৌলতদিয়া ঘাটে উঠতেই লঞ্চ টার্মিনালের সিঁড়িতে বহু মানুষের ভিড়। যেন তিল ধারনের জায়গা নেই। নারী-পুরুষ ও শিশুরা হাতে-মাথায় ব্যাগ-বস্তাসহ বহু আদলের বোঝা নিয়ে লঞ্চে ওঠার জন্য উন্মুখ।
এ ঘাটের লঞ্চগুলো নির্দিষ্ট পরিবহনের জন্য নির্ধারিত থাকলেও বিশেষ সময়ের সে পদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিচ্ছে, নির্দিষ্ট পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো লঞ্চ নেই। পরিবহনের টিকেট নিয়ে যেকোনো লঞ্চে ওঠা যাবে।
কিন্তু ঘোষণা দিয়ে তো লাভ নেই। ঘাটে বাঁধা আছে মাত্র চারটি লঞ্চ। দৌঁড়ে আগে উঠে আসারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ সিঁড়িতে মানুষগুলো যেন গায়ে গায়ে লেগে আছে। কাউকে টপকে কারো আগে যাওয়ার সুযোগ নেই। ওদিকে যাত্রীদের ভিড় আর লঞ্চ সংকটের সুযোগ নিচ্ছে ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝিরা। যাত্রীদের লক্ষ্য করে তারা হাঁকছে, লঞ্চের আগে যেতে না পারলে টাকা ফেরত।
তপ্ত রোদে সাধারণ মানুষগুলো ছুটছে তো ছুটছেই। একদিকে কর্মস্থলে ফেরার তাড়া। অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার অন্তহীন আশঙ্কা। সবাই চায় নিরাপদে আর যত দ্রুত সম্ভব গন্তব্যে ফিরতে। রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষগুলো দীর্ঘদিন পর ঈদ করতে গ্রামে গিয়েছিলেন। তাদের আবার রাজধানীতে ফিরে আসার অপেক্ষা সইছে না।
লঞ্চঘাট পেরিয়ে খানিক এগিয়ে আসতেই যাত্রীদের ভিড় আর দৌড়াদৌড়ি যেন আরও বেড়ে যায়। এ ফিরতি মানুষগুলো আরও অন্তত দেড়-দুই কিলোমিটার দূর থেকে দৌড় শুরু করেছেন। সবার লক্ষ্য লঞ্চঘাট।
ফেরিঘাটের দিকে মুখ ফিরিয়ে যতগুলো বাস দাঁড়িয়ে, তাতে যাত্রী ছিল হাতেগোনা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলো যতক্ষণে ফেরিঘাটে পৌঁছেছে, ততক্ষণে অধিকাংশ যাত্রীই নেমে গেছে।
উপকূলীয় জেলা বরগুনার বেতাগী থেকে আসা যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, ভোরে এসে দৌলতদিয়ায় যানজটে পড়েছি। ফেরি পার হতে না পেরে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করছি। ওপার থেকে অন্য বাসে যেতে হবে। সঙ্গে নারী ও শিশু থাকায় অনেক কষ্ট হবে ঢাকায় ফিরতে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা যাত্রীরা তাদের কষ্টের কথা এভাবেই জানালেন বাংলানিউজকে।
উপকূলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো যাত্রীর রাজধানীতে প্রবেশের পথ এটি। বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা এ পথে আসে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে তাদের এভাবেই দুর্ভোগে নাজেহাল হতে হয়।
দৌলতদিয়ার ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের পর ঘাটের এমন দৃশ্য এখন অনেকটা স্বাভাবিক। গত তিন দিন ধরে ঘাটে ভিড় বেড়েছে। আজ তুলনামূলক ভিড় একটু বেশি।
এদিকে দিগন্ত পরিবহনের সুপারভাইজার ফরিদুল আলম বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু যানজটের কারণে বাসের সময়সূচি নির্ধারিত রাখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৩
আরআইএম/এসএইচ/জিসিপি