ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইড’র Bengal Tiger Conservation Activity তে ‘ওয়াইল্ডটিম’ মূল সংস্থা হিসেবে কাজ করার জন্য মনোনীত হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ইউএসএইড’র বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ এদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ওয়াইল্ডটিমের সঙ্গে পার্টনার হিসেবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশন এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ । প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০১৪ সাল থেকে।
১৯৭১ সাল থেকে ইউএসএইড’র মাধ্যমে আমেরিকার জনগণ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ক্ষেত্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার (চার হাজার আটশত কোটি টাকার অধিক) অর্থ সাহায্য প্রদান করেছে।
ইউএসএইড তাদের প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘ সংরক্ষণে ১৩ মিলিয়ন ডলার (একশত চার কোটি টাকা) ব্যয় করবে। চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাঘ ও সুন্দরবনের নিকটবর্তী মানুষদের জন্য সুন্দরবনকে একটি নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলা। প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক জ্ঞানের প্রসার, অবৈধভাবে বন্যপ্রাণীর পাচার কমানো, মানুষ-বন্যপ্রাণী দ্বন্দ্ব কমানো এবং বন সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় মানুষের জীবিকা নির্বাহে কাজ করা এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এছাড়া, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই প্রকল্প বাংলাদেশি মানুষদের ভেতর থেকে নতুন নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করবে এবং তাদেরকে বড় আকারের পরিবেশ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ করে গড়ে তুলবে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা একত্রে কাজ করবে।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে ‘ওয়াইল্ডটিম’র প্রধান নির্বাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার ক্ষেত্রে প্রকল্পটি এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ। এই প্রকল্পে সম্পৃক্ত হতে পারায় ওয়াইল্ডটিম দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
ওয়াইল্ডটিম
২০০৩ সালে বাংলাদেশি কয়েকজন প্রকৃতিপ্রেমিক ওয়াইল্ডটিম (পূর্বের নাম – ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৩ সালে জন্মলগ্ন থেকেই ‘ওয়াইল্ডটিম’ বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করে আসছে। ২০০৮ সাল থেকে ওয়াইল্ডটিম রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি বলে খ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে তাদের কাজের পরিধি বিস্তার করে।
বাংলাদেশে বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা হিসেবে ‘ওয়াইল্ডটিম’ বাংলাদেশ বন বিভাগের সঙ্গে মিলে ‘বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০০৯-২০১৭)’ তৈরি করে।
বাঘ সংরক্ষণে অবদান রাখার অংশ হিসেবে ‘ওয়াইল্ডটিম’ সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মানুষ, গবাদি পশু এবং বাঘ রক্ষা করতে ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক সম্বলিত ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স’ টিম নামক একটি দল গঠন করে।
এছাড়া, বন্যপ্রাণী শিকার রোধে ‘ওয়াইল্ডটিম’ সুন্দরবনের গ্রামগুলোতে মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসছে, যা এসব অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে একটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। একইসঙ্গে বাঘ রক্ষার্থে বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজও ‘ওয়াইল্ডটিম’ করে যাচ্ছে।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অবদান রাখার জন্য ‘ওয়াইল্ডটিম’ ২০১১ সালে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন’ পদক লাভ করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৩
এইচএ/আরআইএস