শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): স্বাভাবিকভাবে কখনোই ডুমুরের ফুল দেখা যায় না। কেউ বিরামহীন চেষ্টা করলেও তা অসম্ভব।
ডুমুরের ফুল হয়, তবে ফলের ভেতরেই সবার অলক্ষ্যে গোপনে ফোটে ফুলটি। থাকেও ফলের ভেতরেই। অন্য ফুলের মতো তাই তাকে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
এজন্যই ‘ডুমুরের ফুল’ প্রবাদ বাক্যটি বাংলা ব্যাকরণে স্থান করে নিয়েছে। কোনো ব্যক্তির দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর হঠাৎ সেই ব্যক্তি দৃশ্যমান হলে বাক্যটির ব্যবহারে অভ্যর্থনা জানানো হয়।
শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাওর বেষ্টিত মতিগঞ্জ এলাকায় হঠাৎ দেখা গেল, গাছভর্তি ডুমুর (Fig বা Ficus)। হাজার হাজার, গাছের গায়ে বিন্দু বিন্দু হয়ে লেগে রয়েছে। ফলটি এখনো পরিপক্ক হয়নি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের অধ্যাপক এম এ রহিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ডুমুরগুলো হলো জগডুমুর বা যজ্ঞডুমুর। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ficus racemosa। ডুমুরগুলো আমরা ছোটবেলায় খেয়েছি। জ্বর হলে ভাজি বা ভর্তা করে খেতে দেওয়া হতো। এটিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও এটি খুবই ভালো’।
‘জগডুমুরের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। কোনোটি বিশ-ত্রিশ গ্রাম, আবার কোনোটি পঞ্চাশ-ষাট গ্রাম ওজনের হয়। পাকলে কোনোটি লাল, আবার কোনোটি হলুদ রং ধারণ করে’।
এম এ রহিম আরো বলেন, ‘আরেক প্রজাতির মূল্যবান ডুমুর আছে, যেটিকে মিশরীয় ডুমুর (Egyptian Ficus) বলা হয়। এটি খুব রসালো ফল ও অনেক বড় হয়। এটি দু’ভাবে খাওয়া যায়। একটি হলো কাঁচা সরাসরি খাওয়া। অন্যটি হলো রোদে শুকিয়ে কাঁচের কন্টেইনারে রেখে সারা বছর খাওয়া। আন্তর্জাতিক ফাইভস্টার হোটেলগুলোতে এর কদর সর্ব্বোচ্চ’।
তিনি আরো বলেন, ‘আশার কথা হলো, আমরা বাউজাম প্লাজম সেন্টারে মিশরীয় ডুমুরের চাষ করছি। এর পাঁচটি জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে একটি নিউইয়র্কের ভ্যারাইটি, একটি ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যারাইটি ও দু’টি পাকিস্তানের ভ্যারাইটি’।
ডুমুর দেহের ওজন কমানো, পেটের সমস্যা দূর করা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখাসহ নানা উপকার করে বলেও জানান এই উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
বিবিবি/এএসআর