ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘বজ্জাত’ হরিণ ভাগিয়ে দিলো বনমোরগ

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
‘বজ্জাত’ হরিণ ভাগিয়ে দিলো বনমোরগ কুয়াশা খুব বেশি নয়, তবে বৃষ্টির মতো পানি ঝরাচ্ছিল বৃক্ষগুলো! ছবি: আসিফ আজিজ

শ্রীমঙ্গল থেকে: হরিণজোড়া এতো বজ্জাতগিরি করবে কে জানতো! ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রায় গায়ে সোয়েটারের ওপর জ্যাকেট চাপিয়ে লাউয়াছড়া যাওয়া। উদ্দেশ্যে শীতের শহরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উপভোগ করা। সঙ্গে ভোরে বন্যপ্রাণী অন্বেষণ।

সাড়ে ৬টার শীতে আঙুল বাঁকানো দায়। লাওয়াছড়ার জানকিছড়া বিটে তখনও আলো ফোটেনি ঠিকঠাক।

কুয়াশা খুব বেশি নয়, তবে বৃষ্টির মতো পানি ঝরাচ্ছিল দৈত্যকার বৃক্ষগুলো। বনরক্ষী জুলহাস আর শফিক তখন জগিং করছেন। কারণ বাইরে সাড়ে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস মানে লাউয়াছড়ায় অনুভূত হচ্ছে সাড়ে চার-পাঁচ।  
ছবি: আসিফ আজিজএতো সকালে আগন্তুক দেখে একটু অবাক তারা। বললাম বনমোরগ আর হরিণ দেখতে চাই। শফিক বললেন, সামনে এগোলেই পাবেন। তার কথমতো রেসকিউ সেন্টারে মনা, রানী, জেমস তখন জেগে গেছে (এখানকার পোষা তিন হরিণ)। খাওয়ার জন্য আকুপাকু করছে তারা। আর ঘুমোবেই বা কী করে, আলো ফুটতেই তো বনমোরগের টানা ঘুম ভাঙানি ডাক।  

বনমোরগের ডাকে গোটা বন যেন জেগে গেলো মুহূর্তে। ডাক শুনে বনমোরগ বনে ছাড়া অবস্থায় দেখার উত্তেজনায় কুয়াশাভেজা মাকড়সার জাল আর ডাল-পাতা সেঁধিয়ে ধীর পায়ে ঢোকার চেষ্টা। মোরগটি তখনও ডেকে চলেছে। অবশ্য জুলহাস বলছিলেন, এরা দলে থাকেই বেশি। একাধিক থাকলেও বোঝা মুশকিল।  
ছবি: আসিফ আজিজকিন্তু হিমশীতে গা-ঘামা সে উত্তেজনায় জল ঢাললো ‘বজ্জাত’ দুই মায়া হরিণ। আমাদের গতিবিধি টের পেয়ে এমন বিটখিট্টা ডাক দিলো যে পুরো বন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। ডাক তো দূরের কথা পাতা নড়ার শব্দও যেন বন্ধ হয়ে গেলো। সাধে কি আর বজ্জাত বলতে ইচ্ছে হলো!
 
মন খারাপ হয়ে গেলো। তবু আশা নিয়ে সামনে এগোনো। চিকন ঝিরির পা আটকানো বালুর ট্রেইল ধরে হাঁটা। সঙ্গী শাপলা আপুর এটা আবার প্রথম বনের ভেতরে ঢোকা ও টিলায় ওঠা। জুলহাসের আশা এই সাতসকালে একটি না একটি দেখা দেবেই। হাঁটতে হাঁটতে ওঠা হলো টিলায়। কান খাঁড়া করে, মাথা নিচু করে দেখার চেষ্টা কোনো মোরগ কিংবা হরিণ হাঁটছে কিনা। কিন্তু সহায় হলো না ভাগ্য।   
ছবি: আসিফ আজিজজুলহাসের পরামর্শে বন থেকে বেরিয়ে সড়ক ধরে হাঁটা। এখানে নাকি বনমোরগদের আড্ডা আছে। রেসকিউ সেন্টারের পাশে যেমন হরিণের উচ্ছিষ্ট খাওয়ার জন্য আসে তেমন শুকনো মৌসুমে খাবারের অভাবে রাস্তার আশপাশে আসে চলতি পথে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চাল, গম, ধান প্রভৃতি খেতে।  
 
কিন্তু সেখানেও হতাশ হয়ে ডলুছড়া ট্রেইলের বাঁশঘেরা বনে ঢোকা। লোকজনের আনাগোনা এদিকে কম। আবার হরিণের জন্য পর্যাপ্ত খাবার থাকায় এদিকটায় তারা থাকে বেশি। সেটা টের পাওয়া গেলো মিনিট দশেক হেঁটেই। রাস্তার পাশেই টাটকা বিষ্ঠা পাওয়া গেলো হরিণের।
 
ততক্ষণে আবার শফিক ভাইয়ের ফোন, লাউয়াছড়া প্রধান সড়কের পাশে একটি বনমোরগের দেখা পাওয়া গেছে। কিন্তু এখান থেকে গিয়ে সেটা দেখাও সম্ভব নয়। আফসোস বেড়ে গেলো আরও। কনকনে শীতে আবারও হতাশ। দেখা হলো না এবার বনমোরগ-হরিণ। অন্য প্রাণীরা যেন গোস্বা করে বসলো। দেখা দিলো না তারাও। শীতের সকালে এমনিতেই এই দু’টি ছাড়া অন্য প্রাণী নাকি বেশি বের হয় না।  
ছবি: আসিফ আজিজঘণ্টা দুয়েক বনের ভেতর হেঁটে মূল সড়কে আসতেই সেখানে থাকা শফিক ভাই বললেন, ভুল হেয়ে গেলো। এতো সকালে সড়ক ধরে হাঁটলেই বরং নিশ্চিত দেখা পেতেন। কিন্তু ৮টা বেজে গেলে আর একটিকেও পাবেন না।
 
এবার হলো না তো কি আছে, ফি-বার নিশ্চয় দেখা হবে বনমোরগ কিংবা মথুরার সঙ্গে। এ আশা নিয়েই ফেরা।


বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
এএ/এইচএ/

আরও পড়ুন
** যতো শীত ততো পাখি বাইক্কা বিলে
** বদলে গেছে পারাবত, বদলাননি যাত্রীরা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।