ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৭
কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে-ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: সুন্দরবনের ‘করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র’ থেকে উধাও হওয়া কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে বলে বন বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বিষয়টি জানান।

মূলত বাচ্চাগুলো কেন্দ্রের দু’টি প্যান থেকে নিখোঁজ হয়।

এক থেকে দেড় বছর বয়সী কয়েকটি বাচ্চা ছাড়া অধিকাংশ বাচ্চার বয়স ৬ মাস।

তিনি জানান, ২৯ জানুয়ারি ভোরে কেন্দ্রের একটি প্যান থেকে ৩৬টি কুমির ছানা নিখোঁজের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরদিন ৩০ তারিখ ভোরে আরো সাতটি বাচ্চার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলো না। সব মিলে দু’টি প্যান থেকে মোট ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজ হয়।

এর আগে ৩০ জানুয়ারি বিষয়টি জানার পর চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সময়ে কেন্দ্রে কুমিরের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেন বাচ্চাগুলোকে শিয়াল বা বন বিড়ালে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেন। তবে এসিএফের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে বাচ্চা গুলোকে হত্যা করা হয়েছে।

ডিএফও সাইদুল ইসলাম বলেন, এসিএফ-এর প্রাথমিক তদন্তে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে করমজল কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃত অবস্থায় ৬টি বাচ্চা পাওয়া গেছে। এছাড়াও আরও দু’টি বাচ্চার বিচ্ছিন্ন মাথা ও একটি লেজ পাওয়া গেছে।

ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জনা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কুমির ছানাগুলো হত্যার কারণ জানতে চাইলে ডিএফও বলেন, ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় করমজল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলামের সঙ্গে ওই কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কর) মাহাবুব হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ওই বিরোধের জের ধরে ওসিকে বিপদে ফেলতেই লস্কর কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করে।

এদিকে, প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় কেন্দ্রের  বনকর্মী (লস্কর) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বন বিভাগ। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরেরও প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কেন্দ্রে দেখভালের দায়িত্বে থাকা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করা জাকির হোসেনকেও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং মংলা থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করছে বন বিভাগ।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্র জানায়, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে ২০০২ সালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজলে দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর জন্য বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের ৩২ লাখ টাকা ব্যয় হয়।

শুরুতে জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রে নোনা পানির দু’টি নারী কুমির-জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও রয়েছে।

করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আবদুর রব বলেন, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের অস্তিত্ব বিলীনের পথে। শুধু টিকে আছে লবণ পানির কুমির। এই প্রজাতির কুমির সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর গড় আয়ু ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত।

প্রজনন কেন্দ্রে থাকা ১৭৭টি কুমিরের মধ্যে চুরি হওয়ার পর বর্তমানে ৩টি বড় কুমিরসহ মোট ১৩৪টি কুমির রয়েছে।

বন বিভাগের পক্ষ থেকে কুমিরগুলোকে হত্যার কথা বলা হলেও ওই ৪৩টি কুমিরের অধিকাংশ পাচার হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

** সুন্দরবনের কুমির প্রজনন কেন্দ্রর ৪৩টি কুমির ছানা উধাও

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।