ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রজনন ঝুঁকিতেও মুক্ত ‘বউ কথা কও’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
প্রজনন ঝুঁকিতেও মুক্ত ‘বউ কথা কও’ গাছের ডালে বসে আছে বউ কথা কও, ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: চা বাগানের টিলায় টিলায় কিংবা বনের নির্জন গভীরে যে পাখির ডাক বহু দূর থেকে বারংবার প্রতিধ্বনিত তার নাম ‘বউ কথা কও’ (Indian Cuckoo)। এ পাখির ডাকটি একক ও অভিন্ন। বাংলা সাহিত্যের অনুভূতিজুড়ে এ পাখিটির নাম জনপ্রিয়তার সঙ্গে মিশে রয়েছে।
 

৩৩ সেন্টিমিটারের বউ কথা কও ‘কোকিল’(Western Koel) গোত্রের পাখি। প্রচণ্ড প্রজনন ঝুঁকি নিয়ে কোকিলারা যেভাবে অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে ‘বউ কথা কও’ও তাই।

তারপরও বেশ সফল। কিন্তু কি করে?

বউ কথা কও বলে ডাকছে বউ কথা কও পাখিটি, ছবি: আবু বকর সিদ্দিকপ্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, পৃথিবীতে ১১ হাজারের বেশি পাখির প্রজাতির মধ্যে ১০০ প্রজাতির ‘কোকিল’ রয়েছে যারা প্রজননের ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন। সব পাখি ডিম পেড়ে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা লালন-পালনে ছানাকে বড় করে, শুধু ওই ১০০ প্রজাতির কোকিল ছাড়া। অন্য পাখি বাসায় ডিম পেড়ে আসা- এই মারাত্মক ঝুঁকিটা কোটি বছর ধরে করে আসছে কোকিল।
গাছের ডালে বসে আছে বউ কথা কও, ছবি: আবু বকর সিদ্দিক
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিজে বাসা বেঁধে ডিম পেড়ে তা দিয়ে বাচ্চাকে খাইয়ে বড় করা হলো সবকিছুই নিজের হাতের নিয়ন্ত্রণে থাকা। ভালো হোক মন্দ হোক নিজেই করা যায় সবকিছু। যখনই এটা অন্যের ঘরে দিয়ে চলে আসা যায় তাহলে তো জানাই হলো না কি হচ্ছে?– অন্যের বাসায় ডিম পাড়লে অন্য পাখির একটি ডিম নিচে ফেলে দিতে হয়।

ছাতারে ধরা যাক– একটি ছাতারে (Babblar) পাখি নিজে একসঙ্গে তিনটি ছানা তোলে। এখন বউ কথা কও পাখিকে ছাতারের একটি ডিম ফেলে তারপর নিজের ডিমটি পাড়তে হয়। এখন যদি ছাতারে বুঝতে পারে যে এই ডিমটি তার নয়, তাহলে তো সব প্রচেষ্টাই বিফল হয়ে যাবে। তাছাড়া পাখিটি তো সারাক্ষণ তার নিজের ডিমে তা দিচ্ছে। এখানে অন্য পাখি এসে ডিম পাড়াও কঠিন। সুতরাং, ওই পাখিকে ভুলিয়ে চালাকি করে বাইরে আনতে হবে। পাখিটি বাসা থেকে অন্যত্র গেলে তখনই ডিমটি দ্রুত পেড়ে দিয়ে আসতে হবে। তারপরেও অনিশ্চিত রইল যে – এই বাচ্চা হবে কি না?

ফিঙেঅপর একটি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ইনাম আল হক বলেন, এই যে যার বাসায় ডিম পাড়া হলো ওই পাখির ডিমটি মাটিতে ফেলে দেওয়া হলে তার বংশ যদি বৃদ্ধি না হয় তাহলে ক’দিন পরে যদি ওই পাখিটিও বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে কার বাসায় ডিম পাড়বে? তার মাঝে এটা ‘সিমবায়োটিক’ অর্থাৎ দু’জনেরই উপকার হতে হবে। যে আরেক জনের বাসায় ডিম পাড়লো তার যদি অপকার হয় তাহলে কিন্তু সেও বাঁচবে না।
শালিক
‘বিষয়টি ভালো করে খেয়াল করে দেখুন – বউ কথা কও সর্বদাই ‘পালক বাবা-মা’ (ফোস্টার প্যারেন্টস) পাখিদের বেছে নেয় যারা অন্য পাখির বাচ্চা পালবে। সেই পালক বাবা-মা পাখি হিসেবে ছাতারে বা ফিঙে কিন্তু বেশ শক্তিশালী পাখি। তারা বছরের একবারের চেয়ে বেশি বাসা করে ছানা তুলতে পারে। কোকিল যাদের বাসায় ডিম পাড়ে সেই কাক বা ছাতারে অথবা ফিঙে কেউই খারাপ অবস্থানে নেই। বরং অন্য পাখি বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে, যেমন শকুন।

কোকিলবউ কথা কও এর ডিম ছাতারে (Babblar) ছাড়াও শালিক (Maya), ফিঙে (Drongo) পাখি ফোটায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বউ কথা কও কিন্তু এক প্রজাতির পাখির বাসায় ডিম পাড়ে না। বেশ কয়েক প্রজাতির বাসায় ডিম পাড়ে। অর্থাৎ, যে পাখিটির সঙ্গে বউ কথা কও এর ডিমের রং এবং আকার মিলবে ওই সুনির্দিষ্ট পাখিটির বাসাটিকেই বংশ পরম্পরায় ধরে তারা পছন্দ করে ডিম পড়ে যায় বলে জানান পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।