প্রভাতের আলো চোখ মেলে তাকালেই কৃষ্ণচূড়া ঝরে পড়ে নিচে মাটিতে; ঘাসে। রাত্রিদীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে যায় নিমেষে।
এই নিয়ে দু’পাশ দিয়ে বহু দূরে এগিয়ে গেছে চা-গাছের সারি। চা-গাছ সেও শিশিরবিন্দু গায়ে মেখে বহুকাল ধরে বসে আছে– রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার ক্ষণিক পরশের জন্যে। কিন্তু কোথায়! কৃষ্ণচূড়া আজোবধি তার আলিঙ্গনে এসে ধরা পড়েনি যে! হয়তো তার ক্যামেলিয়া-সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়ার ততটা মন কাড়েনি বলে।
তাই পথ-প্রান্তরের তৃণ বা ঘাসকে চা-গাছ সহ্য করতে পারে না। কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে চা-তরুর বিরোধ যেন জন্মজন্মান্তরের। বড় অভিমান আর দীর্ঘ ঈর্ষার কালো মেঘ চা-গাছের অস্তিমজ্জাজুড়ে। ...
দুই.
গাছের ডালে ফুটে থাকা ফুলগুলো সুন্দর, নাকি পথের বুকে ঝরাফুলের বাহারি রূপটাই সুন্দর? –এই দুই প্রশ্নে আমাদের ফুলেল অনুভূতি তখন মিলেমিশে একাকার। হৃদয় ঠিক বুঝে উঠতে পারে না– কার মূল্যটি ঠিক কেমন?
দুটোরই পৃথক পৃথক শোভা আর সৌন্দর্য। পৃথক পৃথক একেকটি গল্পগাথা। এ দু’য়ের মূল্যায়নে কিছুটা অন্ধ হয়ে যেন হয়ে যেতে হয় নিমেষেই।
হৃদয়তন্ত্রের শাখাপ্রশাখায় ফুল বরাবরই অনন্ত ভালোবাসার কথা জানান দেয়। নিভৃতে দিয়ে যায় যায়-চিরসুন্দরের আহ্বান!
কৃষ্ণচূড়া রক্তবর্ণ বলে এটি তারুণ্যের অদম্য প্রতীক। যে তারুণ্য সকল অমলঙ্গকে মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। জীর্ণ, পুরাতনকে ভেঙে-গুঁড়িয়ে দিয়ে আনে সতেজতা। করে নবীনের আবাহন। জ্বালিয়ে রাখে আগুনঝরা সুন্দরের বর্ণাঢ্য শিখা।
ঘাসের বুকে এসে শিশিরবিন্দুর সাথে কৃষ্ণচূড়ার মিতালির এই অপরূপ দৃশ্য নিবিড় প্রিয় অনুভূতিরই টুকরো অংশ। যা দেখে হৃদয় বারংবার গেয়ে ওঠে সুন্দরের গান। মননের বন্ধ জানালাগুলো হঠাৎই খুলে যায়!
শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের বনপথ ধরে হেঁটে যাবার সময় কৃষ্ণচূড়ার মাটি স্পর্শ করার এমন অপরূপ দৃশ্যটি অবলোকন করতে করতে অন্তত তা-ই মনে হবে।
যেখানে ফুল সেখানেই ‘পুষ্পরেণুগন্ধমাখা’-র প্রসঙ্গ আসতে পারে। ফুলকে ঘিরেই হৃদয়ে জাগে চিরসুন্দরের অভিবন্দনা। যাকে পেয়েছি বা এখনো পাওয়া হয়নি অথবা আগামীর অনুভূতিকে আলো করে যে আসছে-আসবে এ ফুলের সৌন্দর্য-শুভেচ্ছা শুধুই তার জন্যেই।
কৃষ্ণচূড়ার মৃত্তিকা স্পর্শ করবার এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য-নিমগ্ন মুহূর্তটুকু যেন তাকে ঘিরেই। যেন তার প্রতিই সদা নিবেদিত। অথচ যে চির অধরা। যার লাগি চিত্ত ‘সদা পিপাসিত রে...’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
বিবিবি/জেএম