ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শঙ্কামুক্ত নয় ‌মহাবিপন্ন ‘‌বাংলা শকুন’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
শঙ্কামুক্ত নয় ‌মহাবিপন্ন ‘‌বাংলা শকুন’ শ্রীমঙ্গলে উদ্ধার হওয়া মহাবিপন্ন বাংলা শকুন। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: উদ্ধার হওয়া মহাবিপন্ন বাংলা শকুনটির অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। সে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। তবে মুরগির মাংস খেতে দেওয়া হলে নিজে থেকেই খাচ্ছে।

বুধবার (২১ জুন) দুপুর দুইটায় বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গল শহরের শান্তিবাগ এলাকা থেকে বিপন্ন প্রজাতির শকুনটিকে উদ্ধার করে। একটি পরিত্যক্ত মাঠে শকুনটিকে পড়ে থাকতে দেখে তার সঙ্গে খেলা জুড়ে দেয় শিশু-কিশোররা।

এক পর্যায়ে শকুনটিকে গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে তারা।  

খবর পেয়ে বন বিভাগ শকুনটিকে উদ্ধারে ছুটে এলেও তাদের কাছে ছিল না কোনো খাঁচা কিংবা সহজভাবে বন্যপ্রাণি ধরার বিশেষ কোনো পদ্ধতি। দুই ডানা দু’জন টেনে ধরে বন বিভাগের গাড়িতে তোলেন, যা অসুস্থ বিপন্ন শকুনটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।  

বন্যপ্রাণি অফিসে নিয়ে এসে তাকে স্যালাইন ও পানি ইত্যাদি দেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। পরে শকুনটিকে পোল্ট্রি মুরগি খেতে দেওয়া হয়।

এদিকে, শকুন পড়ে থাকার খবর পেয়ে ছুটে আসে শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ‌‌মহাবিপন্ন এই প্রাণিটিকে সেবা-শুশ্রুষার জন্য নিয়ে আসার প্রয়োজন মনে করেনি তারা। বিগত সময়গুলোতে এভাবে বন্যপ্রাণির খোঁজ পেলে ফাউন্ডেশনটি যতো দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে এলেও এবার ঘটলো তার বিপরীত চিত্র।    

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখন আবার আগে মতোই মাথা কাঁত করে আছে। আমরা তাকে স্যালাইন, গ্লুকোজ, পোল্ট্রি মাংস ইত্যাদি খাওয়ানোর পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল’।

এসিএফ আরো বলেন, ‘শকুনটির এমন অবস্থার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। সে হয়তো কয়েকদিন ধরে কিছুই খায়নি বা হয়তো কেউ শরীরে আঘাত করেছে। খাদ্যে বিষক্রিয়ায়ও এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এখনো পরিস্কার করে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, খাদ্য ও ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি’।    

বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মূখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি বাংলা শকুন। গোটা পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতির শকুন এটি। এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশে এ প্রজাতির ৪ কোটি শকুন ছিল। বর্তমানে বিলুপ্ত হতে হতে প্রায় ১০ হাজার আছে। আর বাংলাদেশে ছিল মাত্র ২৬০টি। গত ৩ বছরে ১৩টি বাংলা শকুনকে মৃত পেয়েছি’।

তিনি আরো বলেন, সরকার ২০১০ সালে গবাদি পশুর চিকিৎসায় ‘ডাইক্লোফেনাক’ এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় শকুনের মৃত্যুহার অনেক কমেছে। গত জানুয়ারি থেকে সরকার ঘোষিত শকুন নিরাপদ এলাকায় গবাদি পশুর চিকিৎসায় শকুনের জন্য অন্য ক্ষতিকর ড্রাগ ‘কিটোপ্রোফেন’ এর ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ওষুধগুলো গবাদিপশুকে পুশের পর সেটি মারা গেলে ওই মৃত পশুর মাংস খাওয়ার পরই শকুনগুলো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিল।

সীমান্ত দীপু বলেন, ‘যদি এই শকুনটি ‘কিটোপ্রোফেন’ ড্রাগের মৃত গরুর মাংস খেয়ে থাকে, তবে তাকে বাঁচানো কঠিন। আর সাধারণ আঘাতপ্রাপ্ত হলে উন্নত খাবার ও চিকিৎসায় হয়তো সে সুস্থ হয়ে উঠবে। শকুনটির খাবারে আমরা সহযোগিতা করবো’।

এক সময় প্রচুর পরিমাণে বাংলা শকুন দেখা গেলেও বর্তমানে এটি মহাবিপন্ন। এর ইংরেজি নাম White-rumped Valture। এরা প্রায় ৭৫ থেকে ৮৫ সিন্টিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে। মাথা পালকহীন ও ঘাড় কালচে ধূসর।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।