সিলেটের বনাঞ্চলগুলোর ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানো এ বিপন্ন প্রাণীটি আসলে ‘গন্ধগোকুল’। গন্ধগোকুলের ইংরেজি নাম Asian Palm Civet এবং বৈজ্ঞানিক নাম Paradoxurus hermaphroditus।
মূলত পল্লী কবিরাজদের কারণেই আজ ‘বিপন্ন’ গন্ধগোকুল। চিকিৎসার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যবান এ প্রাণীটির সর্বনাশ ডেকে আনছেন তারা। গন্ধগোকুল তেলসহ এর নানা উপাদানের কথা বলে মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কষ্টার্জিত অর্থ।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ও লেখক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, গন্ধগোকুল যেদিক দিয়ে যায় সেদিক দিয়ে পোলাওয়ে ব্যবহৃত কালিজিরা, চিনিগুঁড়া চালের মতো কিছুটা গন্ধ বের হতে থাকে। এর ঘ্রাণগ্রন্থি থেকে এই গন্ধ নিঃসরিত হয় বলে এর নাম হয়েছে গন্ধগোকুল। এরা মাঝারি আকারের স্তণ্যপায়ী প্রাণী। সর্বভুক ও নিশাচর। দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার। এর মধ্যে দীর্ঘ লেজের দৈর্ঘ্যই প্রায় ৪৮ সেন্টিমিটার।
কবিরাজদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক কবিরাজ এই মূল্যবান প্রাণীকে হত্যা করে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে নিজস্ব পথ্য বানিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে আসছে। আসলে এর কোনো বিজ্ঞানসম্মত নির্ভুল ব্যাখ্যা নেই। আর এভাবেই এ প্রাণীটি আজ বিপন্ন তালিকায় চলে এসেছে।
এর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে ড. মনিরুল বলেন, গন্ধগোকুল সর্বভুক প্রাণী। তবে খাবারের তালিকায় রয়েছে আবাদি ও প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত রসালো ফল। বন উজাড়সহ বনে প্রাচীন গাছপালা ধ্বংস হওয়ায় এরাও মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) গন্ধগোকুলকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত করেছে বলে জানান দেশের এই প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
বিবিবি/এএ