সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য গোখরা সাপ হত্যা প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সরীসৃপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার রহমান বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাপ আসলে মানুষের আশপাশেই থাকে।
আসলে প্রধান সমস্যা হলো- বসতঘরে সাপ কেন প্রবেশ করে? এর অন্যতম কারণ সাপের নিজের আবাসস্থল ধ্বংস ও বসতঘরে ইঁদুর খাবার লোভেই মূলত এরা আসে।
‘এখন সাধারণ মানুষের ঘরে যদি র্নিবিষ সাপও থাকে তাহলে যে কেউই আতংকিত হবেন। সাপের সঙ্গে তো চিরকালই মানুষের সংঘাত। সাধারণ মানুষ আসলে এখনও বুঝে উঠতে পারেনি যে, আঘাত না পেলে সাপ কখনও কাউকে ছোবল দেয় না। তাই সাপের দেখা পেলেই মানুষ তাকে মেরে ফেলে। এই অনুচিত কাজটি সম্পর্কে মানুষের ভুল ভাঙাতে হবে। ’
এদিকে রাজশাহীসহ উত্তরের কয়েকটি জেলায় সম্প্রতিক সময়ে গোখরা সাপ হত্যায় দুঃখ প্রকাশ করে শনিবার (১৫ জুলাই) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আর সাপ না মারতে জোর আহ্বান জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকি মনে হলে বাসায় ‘কার্বলিক’ অ্যাসিড রাখবেন। খুব সমস্যা মনে হলে সাপ ধরে (গ্রামে সাপ ধরার মানুষ পাওয়া যায়) বন বিভাগ বা প্রাণী বিভাগে দিয়ে দেবেন কিন্তু অযথা মেরে নতুন বিপদ ডেকে আনবেন না দয়া করে।
*** সাপ না মারতে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ারের আহ্বান
গত ৪ জুলাই রাজশাহী মহানগরীর মতিহারের বুধপাড়া এলাকার একটি বাড়িতেই ২৭টি গোখরা সাপ মারা হয়। ১৪ জুলাই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের গ্রামশিবপুর গ্রামের একটি বাড়ির শয়নকক্ষে ১২টি বিষধর গোখরা সাপের বাচ্চা পাওয়ার পর সবগুলোকেই পিটিয়ে মারা হয়। এরপর ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার মিরপুরে একটি বসতবাড়ি থেকে আবারো ১৬টি বিষধর গোখরা সাপের বাচ্চার দেখা পাওয়ার পর স্থানীয়রা বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলে। নষ্ট করা ডিমের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এরকম ঘটনা গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি ঘটেছে।
সমাধান প্রসঙ্গে সরীসৃপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার রহমান বলেন, তাহলে এটার সমাধান কি? সমাধান একটাই- আমাদের ফরেস্টগুলো বাঁচাতে হবে। শালবন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম বনগুলোর কথাই বলেন, সিলেটের বিভিন্ন চিরসবুজ বনগুলো কথাই বলেন কিংবা দেশের বিভিন্ন জলাভূমিগুলোর কথাই বলেন না কেন– এই সমস্ত প্রাকৃতিক জায়গাগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। আমাদের শেষ বনগুলোকে যদি আমরা জবরদখল করে বসতবাড়ি বা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করি তবে তা আমাদের বন্যপ্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনবে।
যদিও আমাদের দেশে খুব বেশি ‘পপুলেশন প্রেসার’ রয়েছে, তারপরেও যে কোনো মূল্যে বনগুলো বাঁচাতে হবে। সেই বনগুলোতে গড়ে তুলতে হবে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম।
বন মানেই যে বড় বড় গাছপালা তা না কিন্তু নয়, ‘ওয়েটল্যান্ড’ও কিন্তু প্রাকৃতিক বনের একটি অংশ। এখন যদি এই জলাভূমিতে মাটি ভরাট করে গাছ লাগিয়ে দেন তাহলে তো নানা প্রকারের জলজ জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশটুকুও ধ্বংস হয়ে গেলো। প্রাকৃতিক বন বা সংরক্ষিত বন কিছুতেই ধ্বংস করা যাবে না। ওগুলো বন্যপ্রাণীদের জন্য রেখে দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
বিবিবি/এএ