ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ার দুষ্প্রাপ্য ভেষজ ‘বঁইচি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৭
লাউয়াছড়ার দুষ্প্রাপ্য ভেষজ ‘বঁইচি’ লাউয়াছড়ার দুষ্প্রাপ্য ভেষজ ‘বঁইচি’, ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ছবির সাথে মিলিয়ে এ নামটি শোনামাত্রই জীবনানন্দ দাশ হঠাৎ তার ‘নদী’ কবিতায় ভর করে যেন ফিরে এলেন  :‘বঁইচির ঝোপ শুধু, শাঁইবাবলার ঝাড় আর জাম হিজলের বন...।’ রূপসী বাংলার এই কবির পছন্দের ফলের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি বিপন্নপ্রায় বঁইচিও। 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন খাড়াটিলার উপরে তখন সতর্কতার পর্ব। গভীর মনোযোগ পায়ের দিকে।

একটু অসতর্ক হলেই পা পিছলে যাবার তীব্র সম্ভাবনা। শঙ্কা আর উদ্বেগ দুটোই ভর করে রয়েছে এ অরণ্যভ্রমণে।

গুটিগুটি পায়ে ধীরস্থিরে টিলার উপর চলতে চলতে হঠাৎ মাঝারি আকৃতির একটি গাছের দিকে চোখ আটকে গেল। পাতায় আড়ালে, ডালের ফাঁকে কিছু কিছু ফল ঝুলে আছে। কৌতুহল হলে আরো কাছে এগিয়ে এসে দেখা গেল এগুলো কাঁটালেবুর মতো ফল। এর কয়েকটি আলোকচিত্র তখন দ্রুতই ক্যামেরাবন্দি হয়ে গেল।

‘বিয়োলম’ শব্দ উচ্চারণ করে এর আঞ্চলিক নামটি উচ্চারণ করলেন কমলগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বালিগাঁও ইউনিয়নের ইউনুস মিয়া। এই ফলটির ব্যাপারে দারুণ উচ্ছ্বসিত তিনি।

এর গুণাগুন সম্পর্কে মুখস্তসুরে বললে লাগলেন, ‘একটি হলমি’র (জন্ডিস) দারুণ ঔষধ। কারো যদি হলমি রোগ হয় তবে এই ফল নিয়মিত সাতদিন খেলে হলমি থাকবে না। এটি ফলের মতো খাওয়া যায়। আবার তরকারির মতো রান্না করেও খাওয়া যায়। তবে রান্না করে খেতে হলে বিয়োলম ফলটিকে আগে কেটে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এর অতিরিক্ত কষগুলো বের হয়ে যাবে। তারপর আলুর মতো রান্না করে খাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, মুরব্বিদের কাছে শুনেছি, এই ফলটির পাতা শ্লেষ্মা, কাশি, আমাশয়, হজমের সমস্যাসহ ডায়রিয়াতে অনেক উপকারী। এর ফল, বীজ, পাতা ও ছাল ওষুধ হিসেবে আমাদের গ্রামাঞ্চলে কবিরাজরা ব্যবহার করে থাকেন।

বইপত্র ঘেঁটে এবং উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেল ইউনুস মিয়ার ওই উপকারী ফলটি নাম ‘বঁইচি’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia Indica

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং বহুগ্রন্থের প্রণেতা ড. আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বঁইচি আমাদের দেশের বিলুপ্তপ্রায় একটি ফল। একসময় গ্রামে-গঞ্জে খেতের পাশে, ঝোঁপে-ঝাড়ে এদের প্রচুর পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর চোখে পড়ে না। তবে সিলেট, চট্টগ্রামের কোনো কোনো পাহাড়ে এটি রয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বঁইচির অপর আঞ্চলিক নাম ‘কাঁটাবহরী’। বরিশাল বা এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ বঁইচিকে কাঁটাবহরী নামে চিনে। গাছের শাখা কাঁটাযুক্ত বলে এমন নামকরণ হয়েছে। এটি অনেক ভেষজগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।

দশ-বিশ বছর পরে এই বঁইচি ফলটিকে আর আমাদের দেশে দেখাই যাবে না। এই বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদটি সংরক্ষণের দাবিও তোলেন প্রফেসর ড. আবুল হাসান ।

সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচিগাছে ফুল ধরে।  পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল।  জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে।  কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ।  পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারণ করে।  গোলাকার আঙুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত বলে জানান এই গবেষক।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৭
বিবিবি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।