ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

'কলম্বো লেবু'র দারুণ সুঘ্রাণে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৭
'কলম্বো লেবু'র দারুণ সুঘ্রাণে সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে কলম্বো লেবু; ছবি : বাংলানিউজ

কমলগঞ্জ থেকে ফিরে: গাছেদের কাছে ঘেঁষতেই দারুণ সুঘ্রাণ ভেসে এলো। মৃদুবাতাস সেই অপূর্ব গন্ধটুকু ছড়িয়ে দেবার প্রাকৃতিক দায়িত্বটুকু নীরবে পালন করছে যেন। কী সতেজ অনুভূতি! বাগানজুড়ে গাছের শাখায় ঝুলে রয়েছে বড় বড় আকারের সবুজ-সৌন্দর্য।

মাঝারি আকারের এ ফলের বাগানটির একাংশে কলম্বো লেবুর গাছগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে। এর পাশে অন্য অনেক গাছের উপস্থিতি।

গাছের শরীরে থোকা থোকা লেবু ঝুলে থাকার দৃশ্যেটি বড়ই মধুর।

দুটি লেবুর দিকে চোখ আটকে গেল। কী সুন্দরভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে! এই দুটো লেবু একে অপরের সাথে আটকানো। জন্ম থেকে এভাবেই অবিচ্ছিন্ন তারা। মালির হাত অপেক্ষা করছে কখন তাদের পৃথক করবে। এরপর এরা যাবে পৃথক খাবারের টেবিলে!

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেল, অন্যসব লেবুর তুলনায় স্বাদ বেশি হওয়ায় বিদেশে এই লেবুর চাহিদাও বেশি।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের যোগীবিল নামের গ্রামটি আজ ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক ফলদ সম্ভারের জন্যে। ‘সিদ্দিকীবাদ ফ্রুটস ভ্যালী’ নামের এই স্থানটি গৌরবের আসন দখল করে আছে বৃক্ষপ্রেমীদের হৃদয়ে। এখানকার সমস্ত ফল বিষমুক্ত এবং প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত।

এই ফলদবাগানের পরিচর্চাকারী ব্যক্তির নাম ইউসুব আলী। তিনি এগারো বছর ধরে কর্মরত এখানে। তার হাত দিয়েই ফলেছে শতশত ফল।

 ‘কলম্বো লেবু’ নামটি প্রথম শোনাতেই কৌতূহল জাগালো মনে।

কলম্বো লেবুর ব্যাপারে ইউসুফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, এই লেবুটি অন্যসব লেবুর চেয়ে অনেক বেশি সুগন্ধযুক্ত। লেবুটি কাটলে দারুণ গন্ধ বেরোয়। লেবুটি আকারে কিছুটা বড়। এর বাকল পুরো। রঙ ঘন সবুজ।

এলেবুর বাজারদর সম্পর্কে ইউসুফ আলী বলেন, প্রায় দু’মাস আগে একশত কলম্বো লেবু শ্রীমঙ্গলের বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে গিয়েছিলাম। সেখানকার পাইকারী বাজারের প্রবেশের আগেই আরৎদার রাস্তা থেকেই কিনে নিয়েছেন। একশত লেবুর দাম পেয়েছিলাম ১২শ’ টাকা। আমার কাছ থেকে ১২ টাকা দরে কিনে খুচরা বিক্রেতার প্রতি পিস ২৫/৩০ টাকা দামে বিক্রয় করে থাকে।

আমাদের এখানের সব ফল প্রাকৃতিক সার দিয়ে ফলানো। কোনো প্রকার ক্ষতিকর কীটনাশক এখানে ছিটানো হয় না।

সিদ্দিকীবাদ ফ্রুটস ভ্যালীর স্বত্বাধিকারী মুনিম সিদ্দিকী। কথা হয় তার আত্মীয় আবদুল আহাদের সঙ্গে। পেশায় তিনি একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের অনুপ্রেরণা মুনিম সিদ্দিকী। তিনি একজন বৃক্ষপ্রেমী। তার একক প্রচেষ্টাতেই এখানে গড়ে উঠেছে নানা জাতের ফলসম্ভার। নানা জাতের লেবুও রয়েছে এখানে।

তিনি আরো বলেন, কলম্বো লেবুটি বেশ রসালো ও সুগন্ধিযুক্ত। এ লেবুটির চাষ মৌলভীবাজারে খুব কমই হয়। আমরাই বাণিজ্যিকভাবে এ লেবু চাষ করছি। এই লেবুটি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তবে বাংলাদেশেও বেশ সুনাম ছড়িয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে নরসিংদী জেলায় কলম্বো লেবু ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান মৌলভীবাজার এলেই আমাদের কাছে ভেষজ গুণসম্পন্ন কাটা লেবু এবং আদা লেবু চাইতেন। আমরা তার কাছে ওই লেবুগুলো দ্রুত পাঠিয়ে দিতাম। তিনি আমাদের বড় একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন।

কলম্বো লেবু সম্পর্কে ‘সিদ্দিকীবাদ ফ্রুটস ভ্যালী’র স্বত্বধিকারী মুনিম সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি আমার শ্রীলংকান কলিগকে এই লেবু দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম আমাদের দেশে এই লেবুকে কেন 'কলম্বো লেবু' বলে? তখন তিনি জানান, এই লেবু তাদের দেশে প্রচুর হয়।  তবে নাম থেকে বোঝা যায় যে, এই জাত শ্রীলংকা থেকে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়:১২২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৭/আপডেট ১৩৩৫ ঘণ্টা
বিবিবি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।