কিন্তু না; বিলের পানিতে একটি পাখির ছানা পড়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত মরে যায়নি। পানি তার উড়ন্ত সম্ভাবনার সলিল-সমাধি ঘটনাতে পারেনি।
হঠাৎ এক পাখিপ্রেমীর চোখ আটকে যায়, বিলের উপর ভাসমান বস্তুটির উপর। পানিতে ঢেউয়ের ধারা-উপধারাকে পেছনে ফেলে বস্তুটি ভেসে আসছে সামনের দিকে। তিনি সেই বস্তুটিকে ‘সাপ’ ভেবে ক্ষণিকের উপলব্ধি নিবারণ করেন। কিন্তু না; দৃষ্টি জানান দেয়- আসলে ওটা সাপ নয়, অন্যকিছু।
কিছু সময় গাড়িয়ে যায়। তারপর সেই ভেসে আসা বস্তুটিকে মৃদুভাবে দেখতে পান একটি পাখি! নিমেষেই চমকে উঠেন সেই পাখিপ্রেমী!
সেই সকরুণ গল্পই বলছিলেন অভিনেতা, পাখি পর্যবেক্ষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অতি সম্প্রতি রাজবাড়ির গজারিয়া বিলে আমি হঠাৎ করে দেখতে পেলাম অনেক দূরে পানির উপর দিয়ে সাপের মতো কি যেন ভেসে আসছে। তবে পুরোপুরি সাপও মনে হচ্ছিল না। একটু পর দেখি ওটা উপর থেকে লাফ দিচ্ছে। তখন নিশ্চিত হলাম ওটা সাপ নয়, ওটা পাখিই হবে।
‘দেখলাম পানিতে পাখিটি ক্রমশ খুব পাখা ঝাপটিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে। তারপর আমি একজন লোককে খুব অনুরোধ করে বললাম- ভাই, ওই পাখিটা মারা যাবে, ওটাকে উদ্ধার করা দরকার। আমার অনুরোধ শুনে তারপর ওই লোকটি সাঁতরে গিয়ে পাখির ছানাটাকে তুলে নিয়ে এসে আমার হাতে দিলেন। ’
‘দেখি ওটা বাবুই পাখির ছানা (Baya Weaver)। দেখলাম ওর সমস্ত শরীর ভিজে গেছে এবং পায়েও শক্তি নেই। আমার ক্যামেরার উপর বসিয়ে ওই ভাবেই তাকে রোদের তাপ গায়ে লাগতে সাহায্য করলাম। প্রায় পনের-বিশ মিনিট পরে দেখি ওর শরীরের সমস্ত পানি শুকিয়ে সে বেশ চাঙা হয়ে উঠলো এবং একটু একটু করে ডাকতে শুরু করলো। ’
আদনান আজাদ আসিফ বিস্ময় নিয়ে বলেন, তারপর দেখি, আরো অবাক কাণ্ড! বিলের ওইপারে থাকা তার মা-বাবা এপারে থাকা পাখির ছানাটির ডাক শুনে মুখে খাবার নিয়ে ওর পাশে চলে এলো। মা-বাবা দু’জনে মিলেই তাদের ঠোঁটে করে ছোট পোকা ধরে এনে তাকে খাওয়ালো।
সুখানুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলতে থাকেন, এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলো একটি। আমি অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম সেই অসাধারণ মুহূর্তটি। এভাবে কিছুক্ষণ পর দেখি সেই বাবুই ছানাটি তার মা-বাবার সঙ্গে ডানা মেলে দিলো মুক্ত আকাশে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
বিবিবি/এএ