ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জাবিতে শুরু হয়েছে অতিথি পাখির আগমন

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৭
জাবিতে শুরু হয়েছে অতিথি পাখির আগমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে আশ্রয় নেয়া অতিথি পাখিদের একাংশ; ছবি- রফিকুল ইসলাম রুবেল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের সন্ধানে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অতিথি বা পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এ বছর অক্টোবর শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিং পুলের কাছের লেকটিতে প্রথম অতিথি পাখি আসতে দেখা গেছে বলে বাংলানিউজকে জানান প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান।

তিনি জানান, এ সময় অতিথি পাখি ক্যাম্পাসে আসার প্রধান কারণ হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে এ সময় প্রচুর পরিমাণে অতিথি পাখি হাওড় অঞ্চলগুলোতে আসতে থাকে।

যে কারণে সেখানে খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়। তাছাড়া হাওড় অঞ্চলে পাখি শিকার হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে পাখিরা। তাই খাবার ও নিরাপত্তার কারণে দেশীয় পাখিগুলো শীতের শুরুতেই আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের একাংশ; ছবি- রফিকুল ইসলাম রুবেলঅক্টোবরের শেষের দিকে প্রায় ১ হাজার পাখি এসেছে ক্যাম্পাসে। তার মধ্যে ৯৭% ছোট সরালি। ছোট সরালির অধিকাংশই হাওড় অঞ্চল বিশেষ করে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা  ও মেঘালয়  থেকে এসেছে। মার্চ মাসের দিকে গরমের আভাস পেলেই এরা চলে যাবে। বাকি ৩% পাখি দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে আসে। এর মধ্যে অধিকাংশ বড় সরালি জাতীয় পাখি। ডিসেম্বরের

মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিথি পাখি  আসে এ ক্যাম্পাসে।

সাধারণ দুই ধরনের পাখির আগমন ঘটে এ ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি ডাঙ্গায় বা শুকনো স্থানে বা ডালে বসে বিশ্রাম নেয়। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে ও বিশ্রাম  নেয়। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়।

বর্তমানে ক্যাম্পাসে যে পাখিগুলো দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশ ল্যাঞ্জা হাঁস, খুনতে হাঁস। হাঁস জাতীয় ১০ প্রজাতির পাখি আমাদের ক্যাম্পাসে দেখা গেছে। তবে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ প্রজাতির হাঁস জাতীয় পাখি দেখা যায়। তার মধ্যে ল্যাঞ্জাহাঁস, বালি হাঁস ও ভূতিহাঁস প্রতি বছর আসে। তবে নকতা হাঁস সর্বশেষ ২০০৮ সালে দেখা যায়।

বর্তমানে প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের লেকটি লিজমুক্ত রয়েছে। যার কারণে অধিকাংশ পাখি এই লেকগুলোতে দেখা যাচ্ছে। সুইমিং পুল সংলগ্ন সবথেকে বড় লেক যেখানে এ বছর সর্বপ্রথম পাখি আসতে দেখা গেছে সেই লেকটি অফিসিয়াল ভাবে এখনো লিজমুক্ত রাখা হয়নি।

প্রতি বারের মত এবারো পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে  জানুয়ারি মাসের প্রথম অথবা ২য় সপ্তাহে পাখি মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে আশ্রয় নেয়া পরিযায়ী পাখিরা; ছবি- রফিকুল ইসলাম রুবেল
এবারের পাখি মেলায় দিন ব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছে, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি  দেখা প্রতিযোগিতা, পাখির আলোকচিত্র ও পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, অডিও ভিডিও'র মাধ্যমে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সব থেকে বড় লেকটি (সুইমিংপুল সংলগ্ন লেক) যদি লিজ মুক্ত রাখা যায় তাহলে অতিথি পাখির বসার জন্য সব থেকে ভাল হবে। পাখি যেখানে নিরাপদ বোধ করবে সেখানেই বসবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি পাখি ও

বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটু দৃষ্টি দেন তাহলে হয়তো পাখি সংরক্ষণে জাহাঙ্গীরনগরের যে ঐতিহ্য তা আমরা ধরে রাখতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘন্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।