ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ছোট ফেনী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন, ভাঙন ঝুঁকিতে জনপদ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
ছোট ফেনী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন, ভাঙন ঝুঁকিতে জনপদ অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সাহেবের ঘাট এলাকায় নদী ভাঙন

সোনাগাজী (ফেনী) থেকে ফিরে:  ছোট ফেনী নদীর সোনাগাজী সাহেবের ঘাট এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কয়েকশো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর ও ছোট ফেনী নদীর উপর নিমার্ণাধীন সাহেবের ঘাট ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বালু-দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয়দের মাঝে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত ছোট ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন ও তার সহযোগী মাসুদ। বালু উত্তোলনের ফলে পশ্চিম চরদরবেশ ও পশ্চিম চরচান্দিয়া গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে।

উপকূলীয় এসব অঞ্চলের অসহায় ও নিরীহ লোকদের আহাজারি শোনার যেন কেউ নেই। বালু-দস্যুদের সশস্ত্র ক্যাডার বালু মহালের আশপাশে প্রতিনিয়ত সশস্ত্র মহড়া দিয়ে স্থানীয়দের শঙ্কিত করে তুলেছে।
নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে তোলা হচ্ছে বালুসম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ইতোমধ্যে বহু লোকের ফসলি জমি ও পুকুর ভরাট করে বালু বিক্রি করে যাচ্ছে বালু-দস্যুরা। কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। বালু পরিবহনকারী যানবাহনগুলো দেদারছে চলাচলের কারণে এসব এলাকার রাস্তাঘাট ইতোমধ্যে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অনেকগুলো সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ভাগা এলাকাবাসীর দুর্ভোগ যেন কোনোভাবেই কাটছে না।

পশ্চিম চরচান্দিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম জানান, প্রভাবশালীদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তার দুই একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

জসিম উদ্দিন নামে আরেক কৃষক জানান, তার ফসলি জমি ও পুকুর ভরাট করে জোরপূর্বক বালও রেখে সেখান থেকে বিক্রি করছে দুর্বৃত্তরা। ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না তিনি।

পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামের আরেক বাসিন্দা কোরবান আলী জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রায় দেড় শতাধিক একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পিকআপ ভ্যানে তোলা হচ্ছেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা সাংবাদিকদের বাংলানিউজকে জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রচেষ্টায় নোয়াখালী-ফেনীর যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি করতে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সাহেবের ঘাট ব্রিজ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নির্মাণাধীন ব্রিজটিও ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়াও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের ঘর-বাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।

স্থানীয় চরদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টো ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ইতোমধ্যে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। রহস্যজনক কারণে তারা কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।

বালু উত্তোলনকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুল হক রিপনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মজিবুল হক রিপন জানান, তার লাইসেন্সের ভিত্তিতেই নুরুল আমিন সোনাগাজীতে বালু তুলছেন। তবে জেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া ইজারার আলোকেই বালু তোলা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, এটি ঘোষিত কোনো বালু মহাল নয়, এ ব্যাপারে সরজমিনে পরিদর্শন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
এসএইচডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।