মৌলভীবাজার সংরক্ষিত বনের বিরল একটি প্রজাপতির নাম হারলেকুইন (Harlequin)। এ অঞ্চলে এর উপস্থিতি সর্বপ্রথম নিশ্চিত করে মুনির আহমেদ খান ও তানিয়া খান গবেষক ও আলোকচিত্রী-দম্পতি।
এ প্রসঙ্গে প্রজাপতি গবেষক ও আলোকচিত্রী অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, হারলেকুইন বিরল প্রজাতির একটি প্রজাপতি। প্রচলিত বাংলা নাম নেই। এর বৈজ্ঞানিক নাম Taxila haquinus। Riodinidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই অপরূপ সুন্দর প্রজাপতিটির পাখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ মিলিমিটার। বাংলাদেশে Riodinidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত আরও ৪টি প্রজাতি নথিভুক্ত রয়েছে। এগুলো যথাক্রমে: Palm Judy (Abisara echerius), Double-banded Judy (Abisara bifasciata), Tailed Judy (Abisara neophron) ও Punchinello (Zemeros flegyas)।
মজার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পরিবারের প্রজাপতিগুলোর এক ধরনের মজার স্বভাব রয়েছে। শিকারিকে বিভ্রান্ত করতে এরা পেছনের পাখনা দুটোকে অনবরত দোলাতে থাকে এবং পেছন দিকে সরতে থাকে। দেখে মনে হয় নৃত্য করছে। এজন্য এই পরিবারের প্রজাপতিগুলোকে ‘ডান্সিং বাটারফ্লাই’ বলা হয়।
এরা সাধারণত মাটি থেকে কিছুটা ওপরে আলো-ছায়া যুক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। পাতার অপরের পৃষ্ঠে বসে। শীতকালে পাখনা খুলে দিয়ে রোদ পোহায়। হারলেকুইন প্রজাপতি বংশবিস্তারেরে জন্য Myrsinaceae গোত্রের গাছে ডিম পাড়ে। তবে বাংলাদেশে এখনও এর host plant শনাক্ত হয়নি বলে জানান এই আলোকচিত্রী।
এর রঙের বৈচিত্র্য সম্পর্কে অমিত বলেন, হারলেকুইন প্রজাপতির পুরুষ ও মেয়ে উভয়েরই ডানার রঙে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের পাখনার উপরের অংশ গাঢ় বাদামি; নারী লালচে বাদামি; সমগ্র পাখনায় কালো দাগের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। উভয় লিঙ্গের পাখনার নিচের অংশ লালচে বাদামি হয়।
বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের মণিপুর, মিজোরামসহ উত্তর-পূর্ব কোণের আরও কিছু স্থানে এর বিস্তৃতি রয়েছে। আমাদের দেশের সিলেট অঞ্চলে বিশেষ করে মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনে এর দেখা পাওয়া যায় বলে এই গবেষক জানান।
আইইউসিএন এর লাল তালিকা-২০১৫ গ্রন্থে হারলেকুইনকে বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ (Endangered) বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান প্রজাপতি গবেষক ও আলোকচিত্রী অমিত কুমার নিয়োগী।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮
বিবিবি/আরআর