ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

রাতের দুর্লভ ফুল ধুতরা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৭ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৮
রাতের দুর্লভ ফুল ধুতরা একটু পরই ফুটবে দুস্প্রাপ্য ফুল ‘ধুতরা’। ছবি- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: নিভে আসছে বিকেলের আলো। প্রকৃতিতে তখন সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা। নির্জন গাছগাছালিতে ভরা একটি স্থানে অর্ধপ্রকাশিত হয়েছে ধুতরা ফুল। আর একটু পরেই সে প্রকাশিত হবে নিরবে। সন্ধ্যা আসার সঙ্গে সঙ্গেই এই বিপন্ন ফুলটি চোখ মেলে তাকাবে প্রকৃতির পানে। 

কিন্তু দিনের আলো আসলেই ফুলটি আবার গুটিয়ে নেবে নিজেকে। দিনের আলোর ঝলকানি সহ্য হয় না তার।

এভাবেই ফুলটি গুটিশুটি হয়ে সারাদিন গাছের ডালে ঝুলে থাকে। আবার সন্ধ্যা ফিরে এলেই পাপড়িগুলো মেলে ধরবে রাতের আঁধারে।

তারপর দু-তিনদিনের প্রকাশ-অপ্রকাশ খেলা শেষ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে সে। রাতে জেগে উঠে বলে এই ফুলটিকে অনায়সে ‘রাতকুমারী’ বলা যেতে পারে। কেননা প্রকৃতির অন্ধকারই তাকে জাগিয়ে রাখে, পূর্ণ করে তোলে।  

এক সময় আমাদের গ্রাম-গঞ্জে, সড়ক-জনপথে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত এই ফুলটি। কিন্তু এখন ফুলটি চোখে পড়ে খুব কম। এক শ্রেণির অপরাধীরা ‘চেতনানাশক’ পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করে গাছটিকে নির্মূল করে ফেলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে এই ফুল সম্পর্কে বলেন, অনেকে এই ফুলটিকে ‘ধুতুরা’ও বলে। এ ফুলটির ইংরেজি নাম Devil’s Trumpet এবং উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Datura Metel। ধুতরা গাছের দু’টি প্রজাতি আমাদের দেশে চোখে পড়ে। সাদা ও কালো রঙের ধুতরা। সাদা রঙের ধুতরার বোঁটা, পাতা ও গাছ হালকা সবুজ রঙের এবং কালো রঙের ধুতরা গাছের পাতার বোঁটা ও গাছ বেগুনি মিশ্র রঙের।

তিনি আরও বলেন, অপরিকল্পিভাবে আহরণের ফলেই এই প্রজাতির অস্তিত্ব বর্তমানে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অতি মাত্রায় এর ভেষজগুণ কবিরাজ এবং এক শ্রেণির অপরাধীদের কাছে এই ফুলটির কদর অত্যধিক।

এই উদ্ভিদের গুণাগুণ সম্পর্কে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, ধুতরা গাছের পাতা, ফুল, ফল, বীজ ভেষজ গুণসম্পন্ন। রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, বাতের ব্যথা, প্রভৃতি রোগ দূরীকরণে এই উদ্ভিদের প্রচুর ওষুধিগুণ রয়েছে। তবে কিছু মানুষ এটা অপকর্মে ব্যবহার করছে। আমাদের দেশের ‘মলম-পার্টি’র নামে অপরাধীরা এই বৃক্ষটির বীজ সংগ্রহ করে পাউডারের মতো গুঁড়ো করে খাবারে মিশিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে তার সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, এই উদ্ভিদের বীজের মধ্যে অত্যধিক বিষাক্ত উপাদান রয়েছে যা কোনো কারণে অতিমাত্রায় পাকস্থলীতে গেলে মানুষ এবং প্রাণীর জন্য দু-তিনদিনের গভীর ঘুমসহ মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তবে এর ব্যবহারবিধি এবং সঠিক মাত্রা জেনে তা ওষুধ হিসেবে সেবন করলে কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।