ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

এক চোখ নিয়েই অবশেষে প্রাণে বাঁচলো বিপন্ন বানরটি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
এক চোখ নিয়েই অবশেষে প্রাণে বাঁচলো বিপন্ন বানরটি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ‘লাল বানর’। ছবি  বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এই বানরটি ছিলো মৃত্যুপথযাত্রী। অবশেষে সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রাণী চিকিৎসক ডা. মনজুর কাদের চৌধুরীর চিকিৎসায় অবশেষে প্রাণে বাঁচলো সে। তবে বানরটিকে তার আঘাতজনিত চোখটি হারাতে হলো। তারপরও একটি চোখ নিয়ে সে সুস্থ ও সবল রয়েছে।

সিলেট বন্যপ্রাণী বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২ ডিসেম্বর সিলেটের ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই এলাকা থেকে একটি ‘রেসাস বানর’  উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের কর্মীরা। তখন বানটির ডান চোখ, বাম হাত এবং পা’য় আঘাতপ্রাপ্ত ছিলো।

অস্ত্রোপ্রচার করছেন ডা. মনজুর কাদের চৌধুরী।  ছবি  বাংলানিউজসিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আরএসএম মুনিরুল ইসলাম গুরুতর আহত বানরটির সুচিকিৎসায় যা যা করণীয় তা করতে বলেন।

১৫ দিন চিকিৎসার পর বানরটি সুস্থ হয়ে উঠেছে বিপন্ন বানরটি। প্রাণি চিকিৎসক ডা. মনজুর কাদের চৌধুরীর তত্ত্বাবধায়নে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের হাসপাতালে বানরটির চিকিৎসা করা হয়। শল্য চিকিৎসায় সহায়তা করেন প্রাণী চিকিৎসক জুনেদ আহমদ, সৌরভ রায় ও শাহরুল আলম।

প্রাণী চিকিৎসক ডা. মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন, কোনো ভয়ঙ্কর মানুষ গুরুতরভাবে আঘাত করেছিলো বানরটিকে। তখন বানরটির ডান চোখ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। বাম হাত ও পায়ে এতো জোরে আঘাত করেছিলো বানরটি নাড়াতেই পারছিলো না। চিকিৎসার পর চোখ সংক্রমন থামানো গেছে, তবে এক চোখ নিয়েই বানরটিকে বাঁচতে হবে সারাজীবন। তার হাত-পা পুরো ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষের পৈশাচিক চিহ্ন বানরটিকে বয়ে বেড়াতে হবে সারাজীবন।

তিনি আরো বলেন, এটি ‘রেসাস বানর’  বা  ‘লাল বান্দর’। ইংরেজি নাম Rhesus Macaque, Rhesus Monkey। প্রাচীন বিশ্বের বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বানর বিশেষ। উন্মুক্ত এলাকা, তৃণভূমি, বনভূমি এমনকি পাহাড়-পর্বতের ২ হাজার ৫০০ মিটার বা ৮ হাজার ২০০ ফুট উচ্চ এলাকায়ও এদের আবাস রয়েছে। তৃণজীবী হিসেবে এরা প্রধানতঃ গাছের ফল খায়। এছাড়াও এদের খাদ্য তালিকায় বীজ, শিকড়, গাছের ছাল রয়েছে। মৌসুমী ঋতুতে পছন্দসই পাকা ফল থেকে এরা প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করে। আহত লাল বানর।  ছবি  বাংলানিউজএর স্বভাব প্রসঙ্গে  ডা. মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন, ‘লাল বান্দর’ কলহপ্রিয় জাতি। দলের প্রধান পুরুষ বানর অনুপ্রবেশকারীকে চোখ বড় বড় করে ও মুখ হা করে ভয় দেখায়। ভয় পেলে কাশির মতো খক খক শব্দ করে ডাকে। তীব্র চিৎকার ও দাঁত বের করে একে অপরকে হুঁশিয়ার করে দেয়। দলের আকার ছোট থেকে বড় হতে পারে।

আবাসস্থল ও খাদ্যের প্রাচুর্যের উপর ভিত্তি করে দলের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ৯০ পর্যন্ত হতে পারে। বন্য বানরের দল শহরাঞ্চলের দল থেকে অনেক বড় হয়। দলের প্রধান থাকে একটি প্রভাবশালী পুরুষ বানর বা ‘আলফা মেইল’ বলে জানান ডা. মনজুর কাদের চৌধুরী।

সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আরএসএম মুনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মানুষরা বানরটিকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে তার একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলেছিলো। বানরের চোখটির মাঝে পুঁজ হয়ে গিয়েছিলো। পরে আমাদের সংরক্ষণ কেন্দ্রের ডাক্তার মনজুর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরিপূর্ণ শ্রুশুষা করে অবশেষে বানরটিকে সুস্থ করে তোলা হলো। তবে তাকে সুস্থ করে তোলার স্বার্থে বানরটির ওই আঘাতজনিত চোখটি অপসারণ করা হয়েছে।

এটাকে আমরা হয়তো জঙ্গলে ছাড়তে পারবো না। কারণ যেহেতু তার এক চোখ রয়েছে তাই অপেক্ষাকৃত তার জীবনধারণের সক্ষমতা কিছুটা কম। বনে ছাড়লে সে হয়তো অন্য বাননের সঙ্গে সারভাইভ (টিকে থাকা) করতে পারবে না। তাই এটাকে আমাদের আহত বন্যপ্রাণী পুনবাসন কেন্দ্রে রাখা হবে বলে জানান ডিএফও আরএসএম মুনিরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময় ১১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।