এক সময় আমাদের দেশের গ্রামের বাঁশঝাড়, প্রাকৃতিক ঝোপ, পরিত্যক্ত জমি, বনজঙ্গলে বেশ সংখ্যক সজারু পাওয়া যেতো। কিন্তু তাদের বাসস্থান উজার এবং ক্রমাগত শিকার বর্তমানে স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে বিপন্ন তালিকায় নিয়ে গেছে।
বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ সজারু সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে সজারুর যে প্রজাতিটি রয়েছে তার ইংরেজি নাম Indian Crested Porcupine। আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জে এবং বনজঙ্গলে একসময় সজারু দেখা যেতো। এখন চিরসবুজ পাহাড়ি বন এবং সুন্দরবনে কিছু টিকে আছে।
শরীরে কাঁটা আছে বলে মানুষ এটাকে মারতে মারতে এমন অবস্থা করেছে যে, এখন শুধু সংরক্ষিত বনেই এরা টিকে আছে; তাও বিপন্নভাবে। আড়াই বছর লাগে একটি সজারু যৌবনপ্রাপ্ত হতে। দু’তিনটা বাচ্চা দিয়ে থাকে বলেও জানান আদনান।
তিনি আরো বলেন, এরা ইঁদুর গোত্রের কাঁটাযুক্ত প্রাণী। গ্রামে-গঞ্জে এই প্রাণীকে ধরে উৎসব করে খাওয়া হয়েছে। সচরাচর কলাগাছের সাহায্যে মানুষ সজারু ধরে থাকে। শিকারের ফলেই বর্তমানে সজারু বিপন্ন হয়ে গেছে। গাছের ডাল, লতাপাতা থেকে শুরু করে গাছের শিকড়, শস্যদানা প্রভৃতি এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে।
সজারু শিকার সম্পর্কে আদনান বলেন, যে গর্তে সজারু থাকতো সে গর্ত খুঁড়ে তার শরীরে কলাগাছ গেঁথে দিলেই সে আর যেতে পারতো না। যে গর্তে সজারু থাকে গ্রামের দুষ্টু প্রকৃতির ছেলেরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে গর্তের পাশে চুপ করে বসে থাকতো। দিনে বা রাতে যখনই সজারু গর্ত থেকে বের হতো বা তাদের তাড়া দিতো তখনই সজারু মাটির গর্ত থেকে বের হওয়া মাত্রই কলাগাছটি তার শরীরে ফেলে দিতো। তখন আর সজারু যেতে পারতো না; আটকা পড়ে যেতো। এভাবেই সজারু ধরা হতো।
সজারুর আক্রমণ প্রসঙ্গে আদনান আজাদ আসিফ বলেন, পৃথিবীর যে কোনো প্রাণী রেগে গেলে বা ক্ষেপে গেল সে সামনে থেকে আক্রমণ করে থাকে; এটাই চিরাচরিত নিয়ম। কিন্তু সজারুর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ করে থাকে। কারণ এর ফলে তার কাঁটাগুলো সহজে অন্যের গায়ে গেঁথে ফেলতে পারে সে। এটি হলো সজারুর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব।
পৃথিবীতে বাঘ, চিতা, রামচিতা প্রভৃতি বেড়াল গোত্রের হিংস্র প্রাণীগুলো এই সজারুকে ধরতে গিয়ে বিভিন্ন সময় প্রচুর আহত হয়েছে। শিকারির হাত, পা, গাল, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে সজারুর কাঁটা আটকে গিয়েছে বলে জানান আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
বিবিবি/জেডএস