এরা সাধারণত বাসা করে জলাশয়ের আশপাশে বা জলাভূমি সংলগ্ন বড় গাছে। কিন্তু রিসোর্টের গাছে ডাহুক পাখি বাসা করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান কর্মচারীরা।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৮ মে) দুপুরে কেরানীগঞ্জের আবরার ফার্ম রিসোর্টে।
আদনান আজাদ আসিফ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঘটনাটি শোনার পর এর কারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যদিও ডাহুক পাখির ছানা এরকম জায়গা সাধারণত বাসা করে না। তারপরও আমি মই দিয়ে গাছের উপরে উঠে দেখি আরো তিনটি ছানা! ডাহুকের মোট পাঁচটা ছানা ছিল। সে মোট ছয়টি ডিম দিয়েছিল; পাঁচটি ডিম ফুটেছে এবং একটি ডিম এখনো ফোটেনি। ছানাগুলো ঝড়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত বাসাতে কোনোমতে আটকে আছে। আমাকে দেখে ওরা লাফ দিয়ে মাটিতে পড়তে চাইলে আমি সবগুলোকে ধরে ফেললাম এবং নিরাপদ স্থানে তাদের রাখলাম।
‘তারপর ভালো করে দেখলাম তাদের সেই বাসাটি একদম নড়বড়ে। সেই বাসাটাকে আমি বারবার ঠিক করে দিয়ে বাসায় ওপর ছানাগুলোকে বাসিয়ে দিলে ওরা ওখান থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যেতে চাইছে। বুঝলাম, এই বাসায় তারা কিছুতেই টিকে থাকতে পারবে না। আশপাশে কোনো জলাশয়ও নেই। জলাশয়ে পড়লে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতো। তারপর আমি এবং ওই রিসোর্টের কর্মচারীরা একটা ঝুলন্ত বালতির মধ্যে তাদের বাসাটিকে ঢুকিয়ে দিয়ে ওই গাছের উপর ঝুলিয়ে দিলাম। যাতে ছানাগুলো আর লাফ দিয়ে মাটিতে না পড়তে পারে। ’
নিরাপদে ছানাগুলোকে রেখে দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘বালতিটাকে খুব ভালো করে বেঁধে দিলাম যাতে ঝড় হলেও যেন সেটা ছুটে না যায়। তবে আমাদের সন্দেহ লাগছিল যে, মা ডাহুক পাখিটা এমন পরিস্থিতিটাকে মেনে নিয়ে তার বাচ্চাদের কাছে ফিরে এসে খাওয়াবে কিনা? অপেক্ষার এক পর্যায়ে দেখা গেলো, মা ডাহুকটা ওই বালতির বাসায় ফিরে এসে ছানাগুলোকে একত্রে নিয়ে বসলো। তখন বুঝলাম, ডাহুকের এই ছানাগুলো এ যাত্রায় টিকে যাবে। ’
ডাহুকের বুক সাদা হলেও এর বাচ্চা পুরোটাই কালো হয়। সারাদেশের জলাভূমিতেই ডাহুকদের দেখা যায়। সচরাচর এরা পানির পাশের ঝোপেই বাসা বানায়। জলজ উদ্ভিদ, পোকামাকড় এদের প্রিয় খাবার। জমিতে কীটনাশক দিয়ে পোকামাকড় মেরে ফেলায় এরা খুব খাদ্য সংকটে ভুগছে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৯
বিবিবি/এএ