ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বইছে শৈত্যপ্রবাহ, কাঁপছে ছিন্নমূল মানুষ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
বইছে শৈত্যপ্রবাহ, কাঁপছে ছিন্নমূল মানুষ

রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। বাড়ছে শীতের দাপট। পৌষের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ করেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মহানগরীর ছিন্নমূল মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বইছে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তার উত্তাপ শীতার্ত মানুষের শরীরে উষ্ণতা ছাড়াতে পারেনি।

সন্ধ্যার পর কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। এতে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের।

বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম ও মসজিদের বারান্দায় রাত্রীযাপন করা মানুষরা তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন। একটুকরো শীতবস্ত্রের অভাবে রাতে ঘুম আসছে না তাদের। বিকেলে পর থেকেই রাস্তার পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে তাদের শীত নিবারণ করতে দেখা যাচ্ছে।

তবে মজুদ থাকা ৬০ হাজার পিস কম্বল এরই মধ্যে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তাদের কাছে ৬০ হাজার কম্বল রয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় কম্বল বিতরণও শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শীতার্তদের হাতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় কম্বল বিতরণ হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোরে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আজ চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মাত্র একদিনের ব্যবধানে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। মূলত গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা কমতে থাকে। ওইদিন রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর ১৭ ডিসেম্বর রেকর্ড হয় ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এভাবে তিনদিনে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে এক অঙ্কে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমছে। আরও কয়েক দিন এ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও উল্লেখ করেন এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে বিগত বছরগুলোর আবহাওয়ার পরিসংখ্যান টেনে দেবল কুমার মৈত্র বলেন, গত বছরও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। রাজশাহীতে ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া স্বাধীনতার পর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয় ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সর্বশেষ রেকর্ড।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর থেকে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রতিদিনই কমছে। আরও দু’দিন এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে ২১ ডিসেম্বরের পর দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। কিন্তু সুখবর নেই; সামান্য বিরতি দিয়ে ফের মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে রাজশাহীর ওপর দিয়ে।

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বরে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। এ মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু'টি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে জানুয়ারিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।