প্রকৃতির জন্য মানুষ বরাবরই ধ্বংসাত্মক একটি প্রাণী। তাই প্রাণীরা সব সময় সচেষ্ট থাকে মানুষ থেকে দূরে গিয়ে তাদের নিরাপত্তাটুকু খুঁজতে।
কিন্তু এবার করোনা সংক্রমণকে ঘিরে পথে-প্রান্তরে মানুষের উপস্থিতি শূন্যতায় ঘেরা। এর থেকে দারুণ সুফলটা ভোগ করছে প্রাণীরা। পথের ধারে এই হট্টিটি ছানার দেখা পাওয়ার ব্যতিক্রমী ঘটনাটি প্রকৃতি থেকে শহরের দিকে পাখিদের উপস্থিতির প্রমাণ- এমনটা দাবি করছেন বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।
তিনি হট্টিটি ছানাদের ছবিসহ এর নেপথ্যের গল্পটাও বলেছেন বাংলানিউজের পাঠকের জন্য।
আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমি যখন বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সকালে একটা জায়গা দিয়ে হাঁটছি তখন হঠাৎ দেখি আকাশ থেকে দুটো হট্টিটি পাখি চক্কর দিতে দিতে আমাকে এসে ছোঁ মারার চেষ্টা করছে বারবার। একের পরে এক চেষ্টা করেই যাচ্ছে। সামনের পাখিটা আমার মাথায় ঠোকর মারার চেষ্টা করে উড়ে চলে যাওয়ার পর আবার আরেকটা এসে পুনরায় ঠোকর মারার চেষ্টা চালাতে লাগলো। এভাবে দুটো পাখি একদম ধারাবাহিকভাবে ঠোকর মারতে চাচ্ছে আমাকে।
‘তখন আমার ভীষণ সন্দেহ হলো, দুটো পাখি আমাকে এমন করছে কেন? কিছু এটা সমস্যা আছেই। তখন আমার ধারণা হয় যে পাখি মনে হয় আশপাশে ডিম দিয়েছে। তাদের ডিমের এলাকায় মনে হয় আমি প্রবেশ করে ফেলেছি। এমন ভাবতে ভাবতে এর একটু পরেই হঠাৎ চোখে পড়লো ছানাগুলো। এমন ছদ্মবেশী হয়ে আছে যে, দূর থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই যে- এখানে পাখির ছানাগুলো রয়েছে। ’
তিনি বলেন, তাদের বাসা সারাসরি মাটির উপর। ওখানেই ডিম দিয়েছে, ওখানেই বাসা করেছে। পাখির বাচ্চাগুলো ডাকেওনি, কোনো চিঁচিঁও করেনি। তবে আশপাশ দিয়ে ওদের বাবা-মা উড়ছিল। তাদের বাবা-মা খুবই চিৎকার করে আমার মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করছিল। এটা ছানাদের বাঁচানোর অন্যতম একটি কৌশল।
‘সঙ্গে মোবাইল ছিল। মোবাইলের ক্যামেরা দিয়েই কয়েকটি ছবি তুলেছি। ছবি তোলার সময় ছানাগুলোর একটা ছানা বারবারই আমার দিকে চলে আসছিল। আমি তাকে বরাবার তার বাসায় রেখে দেই। পাখির ছানাগুলোর আকৃতি বোঝানোর জন্য পাঁচটাকা মূল্যের একটি কয়েন রেখে ছবিগুলো বৃহস্পতিবার তুলেছি বান্দারবান থেকে। ছানাগুলোর বয়স ৮ থেকে ১০ দিন হবে। যোগ করেন আদনান আজাদ আসিফ।
এই পাখি তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এই পাখিটার বাংলা নাম ‘লাল-লতিকা হট্টিটি বা হট্টিটি। এর ইংরেজি নাম Red-wattled Lapwing এবং বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus indicus. আকারে এরা কবুতরের মতো; প্রায় ৩২ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির রঙের বৈশিষ্ট্য হলো- গাঢ় বাদামি পিঠ, কালো বুক এবং সাদা পেট। মাথা, ঘাড় ও গলা কালো। লাল চঞ্চুর (ঠোঁট) সম্মুখভাগ কালো। ওড়ার সময় ডানার ত্রিকোণ বাদামি গোড়া, সরু সাদা লাইন আর কালো প্রান্ত চোখে পড়ে।
প্রজনন মৌসুমে এরা সম্ভবত মাটিতেই ডিম পাড়ে। এখন লকডাউনের জন্য চারদিক জনশূন্য। তাই এমন জনশূন্য পথের ধারের পরিবেশকে তারা তাদের প্রজননের সঠিক স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে বলে মনে করেন বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২০
বিবিবি/এএ