রাজশাহী: পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে কোনোভাবেই কমছে না শীতের দাপট। মাঝেমধ্যে তাপমাত্রা বাড়ছে ঠিকই।
এর ওপর তাপমাত্রা কমলে তো কথাই নেই। সবদিক থেকেই যেন শীতের শেকলে বাঁধা পড়েছে রাজশাহী। যতই দিন যাচ্ছে, প্রকৃতি যেন ততই হিম হয়ে আসছে। সূর্যের উষ্ণতাবিহীন এই শহর এখন কাঁপছে মাঘের শীতে।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাতের শুরু থেকে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা। একইসঙ্গে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে দ্বিগুণ।
মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৭টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১শ শতাংশ। ভোরে সূর্য উঠলেও ঘন কুয়াশার কারণে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।
আর এজন্য রাজশাহীতে আজও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা। এদিকে রাজশাহীতে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধানও কমে এসেছে। আর এই কারণে শীতের দাপট বেড়েছে। সেসঙ্গে বইয়ে চলা কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁপছে ছিন্নমূল মানুষ। শীতের তীব্রতায় এখন রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কাজকর্মের নেমে এসেছে স্থবিরতা। শীতের কারণে সকালে পুকুরের পানি বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে থাকছে। মাছ ধরতে জাল ফেলতে পানিতে নামা যাচ্ছে না। যে কারণে এই সপ্তাহে রাজশাহীর বাজারগুলোতে মাছের সরবরাহ কমেছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ। পথের কিনারায় তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ দোকানপাট ও হাট-বাজার। গ্রামগুলোতে শীতের প্রকোপ আরও বেশি। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
মহানগরসহ রাজশাহী অঞ্চলের হাট-বাজারে গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। শীতবস্ত্র কিনতে প্রতিদিনই মহানগরের ফুটপাতে নিম্নআয়ের লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। তবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা যেতে পারছেন না কোনো দোকানেই। অনেকে এখনও তাকিয়ে আছেন সমাজের বিত্তবান ও সরকারি সহায়তার দিকে। তবে ইতোমধ্যে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ডিডি) ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, শীতের কারণে এখন শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরমধ্যে নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডসহ বেশকিছু ওয়ার্ডের রুমহিটার লাগানো হয়েছে। এরপরও ঠাণ্ডাজনিত রোগীদের চিকিৎসা দিতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজও দেশের তাপমাত্রা প্রায় একইরকম থাকবে। তবে, ২৭ জানুয়ারি থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে পারে। তখন আবার শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
এসএস/এএটি