মৌলভীবাজার: দেশের অন্যতম বৃহত্তম হাওর মৌলভীবাজারের হাকালুকিতে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সর্বশেষ পাখিশুমারিতে এই তথ্য ধরা পড়ে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার জেলার ২টি উপজেলা কুলাউড়া ও বড়লেখা এবং সিলেট জেলার ৩টি উপজেলা বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জসহ ৫টি উপজেলার ১৮ হাজার ১শ’ ১৫ হেক্টর পরিমাণ জমি নিয়ে এ হাওরের অবস্থান। তার মধ্যে শুধু বিলের আয়াতন ৪ হাজার ৪শ হেক্টর।
বুধবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাখি শুমারিতে অংশ নেওয়া প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের সাম্প্রতিক পাখি শুমারিতে ৪৬ প্রজাতির ২৪ পাখির হাজার ৫৫১টি জলচর পাখির দেখা মিলেছে। হাওরে ৫৩ প্রজাতির ৪০ হাজার ১২৬টি জলচর পাখির উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৭২টি বিভিন্ন প্রজাতির হাঁসের দেখা মিলেছে। ’বিগত সময়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে হাকালুকিতে ৫৩ প্রজাতির ৪০ হাজার ১২৬টি জলচর পাখির উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল মহাবিপন্ন বেয়ারের ভুতিহাস, সংকটাপন্ন পাতি-ভুতিহাস, মরচেরঙ ভুতিহাস, ফুলুরি হাঁস, কালামাথা কাস্তেচড়া, উত্তুরে টিটি ও উদয়ী গয়ার।
বন বিভাগের সহযোগিতায় আইইউসিএন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে হাওয়াবন্যা, কালাপানি, রঞ্চি, দুধাই, গড়কুড়ি, চোকিয়া, উজান-তরুল, ফুট, হিংগাউজুড়ি, নাগাঁও, লরিবাঈ, তল্লার বিল, কাংলি, কুড়ি, চেনাউড়া, পিংলা, পরোটি, আগদের বিল, চেতলা, নামা-তরুল, নাগাঁও-ধুলিয়া, মাইছলা-ডাক, চন্দর, মালাম, ফুয়ালা, পলোভাঙা, হাওড় খাল, কইর-কণা, মোয়াইজুড়ি, জল্লা, কুকুরডুবি, বালিজুড়ি, বালিকুড়ি, মাইছলা, গড়শিকোণা, চোলা, পদ্মা, কাটুয়া, তেকোণা, মেদা, বায়া, গজুয়া, হারামডিঙা, গোয়ালজুড়সহ হাওরের ৪৩টি বিলে পাখিশুমারি চলে।
ইনাম আল হক আরো বলেন, পাখিশুমারিতে ১৪ প্রজাতির জলচর হাঁস পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পাওয়া জলচর অর্থাৎ হাঁস জাতীয় পাখিদের মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ১২টি পিয়াং হাঁস (Gadwall)। হাওর, খাল-বিলে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৮৯টি পাখির দেখা মিলেছে। তারমধ্যে সারস জাতীয় পাখি ৭ হাজার ৯১৬টি এশীয়-শামখোল (Asian Openbill)। পাখি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ওই পাখি গবেষক বলেন, ‘অন্যান্য বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে শুমারি হতো। এবার দেরিতে হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষে। অধিকাংশ বিলের পানি কমে গেছে। বিলে পানি না থাকায় পাখিদের সেখানে পাওয়া যায়নি। হয়তো ওরা অন্যত্র চলে গেছে। আমরা শুধু কম পানিতে বিচরণকারী পাখিদের দেখা পেয়েছি। মোট কথা, দেখিতে পাখি শুমারি হওয়ায় পাখির সংখ্যা কমে গেছে। ’
‘যেভাবে পাখি কমেছে, তার পেছনে অনেক কারণ আছে। পরিবেশের ভারসাম্য চিন্তা না করে হাওর-বিল শুকিয়ে মাছ ধরাকে অন্যতম কারণ। বিলে নানা প্রজাতির প্রাকৃতিক মাছ না থাকলেও তো মাছের ওপর নির্ভরশীল জলচর পাখিরাও সেখানে আসবে না। ’
‘আরেকটি কারণ হলো বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার। স্থানীয় মানুষরা সচেতন হলেই কেবল এই অবৈধ পাখি শিকার বন্ধ হতে পারে। পাখি শিকার বন্ধ হলেই পাখিরা নির্ভয়ে প্রতিটি জলাশয়ে ঘুরে বেড়াবে। পাখি কমে গেলে মাছও কমে যাবে। যে হাওরে পাখি থাকে না, প্রাকৃতিক নিয়মে সেখানে মাছও হবে না বলে জানান ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্যানুযায়ী, হাকালুকি হাওরে ২০১৭ সালে ৫০ প্রজাতির ৫৮ হাজার ২৮১ পাখি, ২০১৮ সালে ৪৪ প্রজাতির ৪৫ হাজার ১০০ পাখি এবং ২০১৯ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৯৩১ জলচর পাখির দেখা মিলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২১
বিবিবি/এএটি