ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নিঝুম দ্বীপের ৬ হাজার হরিণের জীবন বিপন্নের আশঙ্কা

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২১
নিঝুম দ্বীপের ৬ হাজার হরিণের জীবন বিপন্নের আশঙ্কা

নোয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে নিঝুমদ্বীপ জাতীয় উদ্যানের মধ্যে উঁচু জায়গা না থাকায় উদ্যানে থাকা ৬ হাজার হরিণের জীবন বিপন্নের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

নিঝুম দ্বীপ বন বিভাগ জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মমকর্তা এসএম সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ২০০১ সালে নোয়াখালীর দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ও জাহাজমারা ইউনিয়নের ১০টি চর নিয়ে নিঝুমদ্বীপ জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এর আয়তন ৪০ হাজার ৩৯০ বর্গ কিলোমিটার। নিঝুমদ্বীপের বনে ৪ হাজার হরিণের সুপেয় পানি পানের জন্য অনেক আগে চারটি বড় পুকুর খনন করা হয়েছিল। বর্ষা মৌসুমে হরিণের দল এসব পুকুর পাড়ের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতো।

তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই সব পুকুরের খনন না হওয়ায় পুকুর পাড় অনেকটা সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে পুকুর পাড়গুলো তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য হরিণের দল বিভিন্ন চর ও লোকালয়ে ছুটছে। জরুরি ভিত্তিতে সুপেয় পানির পুকুরগুলো খনন করে চারপাশ উঁচু করলে আগামীতে বন্যার হাত থেকে হরিণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীকে রক্ষা করা যেতে পারে।  

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দিনাজ উদ্দিন জানান, হরিণের আশ্রয়ের জন্য তেমন কোনো উঁচু জায়গা নেই। বেশিরভাগ হরিণ গাছের ডালের সঙ্গে মুখ উপরে তুলে পানিতে আছে। বনের মধ্যে বন বিভাগ থেকে তৈরি কয়েকটি পুকুর ও পুকুরের পাড়ও সমতল ভূমিতে পরিণত হওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে বর্তমানে হরিণের আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। নিঝুমদ্বীপের হরিণকে বাঁচাতে উঁচু জায়গা নির্মাণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা খুব জরুরি।  

নিঝুমদ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (বেড়িবাঁধ) নেই। এর ফলে নদীতে জোয়ার এলে মেঘনার কোল ঘেঁষা নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৬০ হাজার লোক জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে নিঝুমদ্বীপের হরিণ ও অন্য প্রাণীও ভেসে যায়। এসব হরিণ বাঁচাতে হলে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং হরিণের আবাসস্থলগুলোতে উঁচু মাটির কিল্লা তৈরি করা দরকার।

জোয়ারের পানিতে জাতীয় উদ্যান নিঝুমদ্বীপ তলিয়ে বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালী বিপুল কৃষ্ণ দাস বাংলানিউজকে জানান, হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন চরে প্রায় ৬ হাজার হরিণ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ৭-৮ ফুট উঁচু জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় হরিণের আবাসস্থল তলিয়ে গেছে। জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নে এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও হরিণের সুপেয় পানির পুকুর খনন করা অত্যাবশ্যক। প্রকল্পগুলো নিঝুমদ্বীপের হরিণ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।