মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের পদ্মবিলের অবারিত জলরাশিতে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
শীতের শুরুতেই পদ্মবিলে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখিরা।
শীতের শুরুতে সংখ্যায় কম হলেও শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি অবস্থান করছে পদ্মবিলে। পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে পদ্মবিলের জল ও স্হলভাগ এখন মুখরিত পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, হারগিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, কাদাখোঁচা, ডাহুক, শামুকখোল, হটটিটি, ঘুঘুসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পাখির কলতানে। তবে এ বিলে পানকৌড়ি ও বালিহাঁস সংখ্যায় অনেক বেশি। এসব পাখির দলবদ্ধ বিচরণ মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের। শুধু পাখিদের বিচরণই নয়, এলাকার দিগন্তজুড়ে বিস্তীর্ণ মাঠের নানা ফসলের সঙ্গে রূপবৈচিত্র্যের নানা রং বিমোহিত করে মানুষকে। অপরূপ মাইলমারী পদ্মবিলকে ঘিরে রয়েছে লক্ষ্ণিনারায়ণপুর ধলা, নওপাড়া, কুলবাড়িয়া, হিজলবাড়ীয়া, হিন্দা, পলাশীপাড়া ও তেঁতুল বাড়িয়া গ্রাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইলমারী পদ্মবিলের বদ্ধ জলে সহস্রাধিক পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণ। জলাশয়ে পাখা ঝাপটে সুখ খোঁজে তারা। কখনও রোদে শুকিয়ে নেয় তাদের শরীর। কখনও কখনও মনের আনন্দে আকাশে ওড়ে এসব পাখিরা। তাদের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠেছে প্রকৃতি। সকালে ও বিকেলে অধিক সংখ্যক পাখি জলাশয়ে অবস্থান নেয়। দিনের অন্য সময় আকাশে উড়ে বেড়ায় এবং খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করে। রাতে পাখিগুলো লোকালয়ে বাঁশের ঝাঁড়, মেহগনি গাছ, বা মাঠের বিভিন্ন গাছে অবস্থান করে। পাখিদের কলতানে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আশা দর্শনার্থীরা। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান মাইলমারী পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় অসাধু পাখি শিকারিরাও অবাধে জাল দিয়ে পাখি শিকার করছে। পদ্মবিলে চালিত ডিঙি কিংবা নৌকায় চড়ে কখনও কখনও তরুণরা খুব কাছাকাছি গিয়ে পাখি দেখার আনন্দ উপভোগ করে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, পরিযায়ী পাখি আমাদের অতিথি। মাইলমারী পদ্মবিলে আসা পাখিদের আবাসস্থল নিরাপদ করা হবে।
বার্ড ক্লাবের সদস্য ও পাখি গবেষক এমএ মুহিত বলেন, গাংনী উপজেলাকে পাখিদের অভয়ারণ্য বললে ভুল হবে না। শীতের শুরুতে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে গাংনীর বিভিন্ন জলাভূমি মুখরিত হয়ে থাকে। উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন পাখিদের অভয়ারণ্য নিয়মিত দেখভাল করলেও শিকারিদের হাত থেকে বিশেষ করে পরিযায়ী পাখিরা রেহায় পায় না। শীত আসলেই শিকারিদের বিভিন্ন রকমের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করতে দেখা যায়। গাংনীর বিভিন্ন জলাভূমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেজিটেশন থাকায় পরিযায়ী পাখিরা এখানে বেশি ভিড় জমায়। আমরা দেখতে পাই শিকারিদের হাতে কিছু পরিযায়ী পাখি ধরা পড়লেও বক প্রজাতির পাখি ধরা পড়ে। প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শীতের শুরুতে পাখিদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক অভিযান চালায় তাহলে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিরা শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, পরিযায়ী পাখিরা সেই সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পারি দিয়ে এখানে আসছে। আমরা তাদের রক্ষা করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। অসাধু পাখি শিকারিরা তাদের হত্যা করতে পারবে না। খোঁজ নিয়ে এসব পাখিদের আবাসস্থল সুস্থ ও সুন্দর করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২২
আরএ