ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

যেভাবে তীব্র ‘তাপদাহ’মোকাবিলা করে বানর

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
যেভাবে তীব্র ‘তাপদাহ’মোকাবিলা করে বানর বানরটি পানিতে থাকা সঙ্গীর ওপর ঝাপিয়ে পড়ছে। ছবি: আদনান আজাদ

মৌলভীবাজার: চলছে তীব্র তাপদাহ। ফলে শুধু মানুষই নয়, এমন অস্বাভাবিক গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে প্রাণিকুল।

কীভাবে এ গরমে সামলে উঠবে তারা? তাপমাত্রার সর্বোচ্চ পারদ এখন দেশের রাজশাহী অঞ্চলে ছুঁয়ে ঠাই পেয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই তাপমাত্রাই প্রতিনিধিত্ব করছে আমাদের সিলেট অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাকেও।  

গরমের এই ভয়াবহতা থেকে নিজেকে বাঁচাতে অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণীরাও বসে নেই। তারা ঠিকই বিকল্প উপায় খুঁজে বের করে ফেলেছে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা হলেও রেসাস মেকাকরা নিজেকে এর থেকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

চলমান তাপমাত্রায় মানব শরীরে সহজেই অস্বস্তির জানান দেয়। মানুষ তো না হয় গরম দূর করার জন্য বৈদ্যুতিক নানান আয়োজনে পূর্ণ হয়ে গরম নামক শব্দটিকে ঝাটাপেটা করে দূর করতে পারে তার গৃহকোণের অন্তঃপুর থেকে। এভাবেই মানুষ নিজের শরীরকে দিয়েছে বিরমহীন আরাম, হিমেল সুখ। কিন্তু প্রাণিকুল? ওদের তো বৈদ্যুতিক সুবিধাদি নেই। তাহলে তারা কীভাবে এই গরমে মোকাবিলা করে? স্বনামধন্য বন্যপ্রাণী গবেষক, আলোকচিত্রী আদনান আজাদের উত্তর খুঁজতেই তার ক্যামেরা তাক করেছিলেন বন্যপ্রাণীদের অন্যতম প্রতিনিধি ‘কোটা বানর’ (বৈজ্ঞানিক নাম Macaca mulatta) এর ওপর। এটি তার অভিধানগত নাম হলেও সবাই ‘বানর’ বলেই ডাকে। আদনানের লেন্স থেকে উঠে আসা দুর্লভ ছবিগুলোই তিনি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য পাঠিয়েছেন।

আদনানের পাঠানো এই ছবিগুলোতে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহ থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে কী কৌশলগত আশ্রয়েই না তারা বেছে নিয়েছে! বলাই বাহুল্য, প্রাণিজগতের বুদ্ধিমান এবং সামাজিক প্রাণী হলো বানর। আর সেভাবেই সে বুদ্ধি করে সবাইকে নিয়ে গরম তাড়ানোর বিচিত্র এ কৌশলটি রপ্ত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, রীতিমত সেই কৌশলে ডুব দিয়ে নিজে এবং দলকে দূরে রেখেছে দৈনিক তাপদাহ থেকে। আদনান আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘তখন প্রচণ্ড তাপদাহ চলছিল। সুন্দরবনের প্রত্যেকটা প্রাণী যে যেভাবে পারে ছায়ার নিচে বা নিজেদের আশ্রয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বানর লোমশ প্রাণী। অন্যপ্রাণীর থেকে বানরের শরীরের লোকগুলো বড়। হরিণ, বাঘ, বনবিড়াল প্রভৃতি প্রাণীদের সঙ্গে তুলনা করে বলছি যে, এদের শরীরের লোম তুলনামূলক বড়। লোম বড় হওয়ার কারণে এদের গরমও বেশি অনুভূত হয়। আর গরম বেশি লাগার কারণে এরা নিজেদেরকে শীতল রাখার জন্য খালের পাশের গাছে উঠে পানিতে ঝাঁপ দেয়। ঝাঁপ দিয়ে পুরো দলবল নিয়ে পানির সাহায্যে গরমের উত্তাপ নিবারণের চেষ্টা চালায়। ’তিনি বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় পানিতে থেকে এভাবে নিজেদের শরীরটাকে ঠাণ্ডা রাখে। ওই খালের ভেতরই ওরা খেলাধূলা করে। খেলাধূলা থেকে শুরু করে অপরের সঙ্গে খুনসুটি পর্যন্ত এ সবকিছুই তারা পানিতেই করে থাকে বলে জানান আদনান।

তিনি আরও বলেন, বাকি সময়টুকু তারা ডাঙায় থেকে খাবার সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করে। ভোর এবং বিকেলে তারা খাদ্যগ্রহণে নিজেকে নিয়জিত রাখে। কারণ, তখন সূর্যের তাপ কম। আর যে সময় সূর্য মাথার ওপর থাকে তখন তারা পানিতে নামে। সম্প্রতি সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের এ বানরগুলোকে এভাবে বিচিত্রভাবে খালপাড়ের পানিতে খেলা করতে দেখা গিয়েছিল।

কী বিচিত্র এবং দারুণ অপরূপ সে দৃশ্য! নিজ চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন। মা বানরটিও তার কোলের ছোট বাচ্চাটিকে নিয়েও পানিতে নেমেছিল বলে জানান আদনান আজাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।