মৌলভীবাজার: ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই’ –এ প্রবাদ বাক্যটি মাঝে মাঝে তৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে। নিজের দেশের পণ্য, নিজের দেশে উৎপাদনশীল কোনো কিছুর প্রতি আমরা অনেকেই উদাসীন।
আমাদের দেশের বনভূমির যত প্রজাতির দেশি বৃক্ষ রয়েছে তার মধ্যে থেকে কোনো একটি শতবর্ষী বৃক্ষকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ বা সেই বৃক্ষটিকে সংরক্ষণ করে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া এমন প্রচেষ্টা দেখাই যায় না। বরং দেখা যায়, বিদেশি বৃক্ষ নিয়ে অধিক মাতামাতি। আর হা-হুতাশ!
এ যেনো বিদেশি কোনো কিছুর প্রতি গোষ্ঠীভিত্তিক সমর্থন জানিয়ে যুক্তিহীন বেদনাবোধের পর্ব!
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যোনে একটি বিদেশি গাছ আফ্রিকান টিকওক এর মৃত্যু নিয়ে নানা মহলে আলোচনা এবং বেদনার রব উঠেছে। তবে দুঃখের বিষয়, দেশি প্রজাতির মূল্যবান শতবর্ষী বৃক্ষ নিয়ে আমাদের তেমনভাবে মাতামাতি করতে দেখা যায় না।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১শ ফুট উচ্চতা এবং ১২ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট আফ্রিকান টিকওক এর নিম্নাংশে পচন ধরে। গবেষণার পর প্রতীয়মান হয় গাছটি তার জীবনীশক্তি হারাতে চলেছে। ১৯৩০ সালে এখানে কৃত্রিম বনায়ন সৃষ্টি করা হলে নানা প্রজাতির বৃক্ষর মাঝে দুটো আফ্রিকান টিকওক গাছও ছিল। এই দুটো গাছের মাঝে একটি ২০০৬ সালে ঝড়ে উপড়ে পড়ে মারা যায়। লাউয়াছড়া ডাকবাংলো সংলগ্ন এই অপরটিও মারা যাওয়ার পথে। এটির পাতা ঝরে পড়া এবং গোড়ায় পচন দেখে বিষয়টি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিউটকে (বিএফআরআই) অবগত করা হয়েছিল।
বন বিভাগের সিলভিকালচার টিচার্স বিভাগ বহু চেষ্টা করেও বৃক্ষটি থেকে কোনো বংশবিস্তার করা সম্ভব হয়নি। কারণ ‘আফ্রিকান টিকওক' বৃক্ষটির কোনো বীজ ছিল না। ফুল ধরলেও ঝরে পরতো। কয়েক বছর আগে বৃক্ষটি থেকে কাটিং সংগ্রহ করা হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এই আফ্রিকান টিকওক গাছটি এখন একেবারে অস্তিম অবস্থায় রয়েছে। বহুদিন ধরেই গাছটি রোগে-শোকে আচ্ছন্ন। গাছটির বয়স প্রায় শতবর্ষী। এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে বেড়ে উঠা একটি বিদেশি প্রজাতি গাছের মৃত্যু হলো।
তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়ার শতবর্ষী এ বৃক্ষ মারা গেছে বলে আমাদের অনেকের মনে কষ্ট রয়েছে। কিন্তু খেলায় করে দেখেন লাউয়াছড়া পুরোপুরি জীববৈচিত্র্যময় এলাকা। বন্যপ্রাণীরা যে গাছের খাবারগুলো খায় এখানেই সেসব গাছই থাকা উচিত। আফ্রিকান টিকওক বন্যপ্রাণীর কোনো উপকারেই আসতো না। আমাদের সংরক্ষিত বনগুলোতে বাইরে দেশের গাছ না থাকাই ভালো।
আমাদের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। প্রায় শতভাগ বৃক্ষই এখন দেশি প্রজাতির। আমাদের দেশীয় প্রজাতির বড় কোনো গাছ শেষ হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আমাদের আফসোস থাকার কথা বেশি বলে জানান ডিএফও রেজাউল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২
বিবিবি/এএটি