ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ডলফিন সুরক্ষায় ৯টি এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা: মন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
ডলফিন সুরক্ষায় ৯টি এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা: মন্ত্রী

ঢাকা: সুন্দরবনের চাঁদপাই, শরণখোলাসহ মোট ৯টি এলাকা ডলফিনের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে সুন্দরবনে স্থানীয়ভাবে ৭টি ডলফিন কনজারভেশন দল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।

‘শুশুক ডলফিন রক্ষা করি, জলজ পরিবেশ ভালো রাখি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সোমবার (২৪ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, আজকে মাত্র কয়েকটি নদীতে ডলফিন দেখা যাচ্ছে। এর কারণ, আমরা পানি দূষিত করেছি, নদী ভরাট করেছি। এ কারণে ডলফিন রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে আজকে এই দিবস উৎযাপন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে ৪ ধরনের ডলফিন আছে। বাংলাদেশে ২ ধরনের মিঠাপানির ডলফিন দেখা যায়। ইরাবতী এবং গাঙ্গেয় ডলফিন।

মন্ত্রী বলেন, মৎস্যজীবী যারা, তারা যেন ডলফিনের ক্ষতি না করেন বা জালে আটকে ডলফিন হত্যা না করেন সেজন্য মৎস ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দায়িত্ব ও সহযোগিতা আমরা কামনা করি। পাশাপাশি নৌ-যান চলাচলের ফলে আহত বা মারা যাওয়ার হাত থেকে ডলফিন রক্ষায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে আমরা চিঠি দিয়ে সহযোগিতা কামনা করব।

ডলফিন সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেরিন প্রোটেক্টেড এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এর আওতায় ডলফিন রক্ষার্থে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, যে যেখানেই থাকেন না কেনো, কীভাবে বনকে রক্ষা করা যায়, পরিবেশ রক্ষা করা যায় এ বিষয়ে সবাই সচেষ্ট থাকলে এটি কোনো কঠিন কাজ নয়। যে সমস্ত নদীতে আজও ডলফিন টিকে আছে, সেসব জায়গায় এ ধরনের আয়োজন করা উচিত। সুন্দরবনের যেসব জায়গায় ডলফিন রয়েছে, কর্তৃপক্ষ সেই জায়গাগুলোকে শনাক্ত করেছেন। যেখানেই মাছ আছে, সেখানেই ডলফিন। এমন ধারণায় জেলেরা ছুটে যান। ফলে, জেলেরাই আসলে ডলফিনের বেশি ক্ষতি করছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, আমরা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ডলফিনের সুরক্ষায় কাজ করে থাকি। কিন্তু, শুধু প্রকল্পের টিম এই কাজ করতে পারবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে একটি দিনে আলোচনা না করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত। প্রাথমিক শিক্ষার স্তর থেকেই জীববৈচিত্র্য নিয়ে যাতে আমরা সচেতন হতে পারি, সে কারণে একটা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, এরকম দিবস হয় তখনই, যখন কোনো প্রাণি বিপন্ন হয়। মিঠাপানির ডলফিন যে বিপন্ন সেটি, আমরা বুঝেছি। প্রকৃতির যে অবদান, সেটি শুধু মানুষের জন্য না, সকল প্রাণীর জন্য। আমরা স্বার্থপরের মতো সেটি ব্যবহার করছি। শুশুক রক্ষার জন্য আমরা কীভাবে গুরুত্ব দেব, সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

সাংবাদিক ও প্রকৃতিকর্মী মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ডলফিন বা শুশুক একটা নিরীহ প্রাণী। এদের আমাদের রক্ষা করতে হবে, ভালো রাখতে হবে। এই কাজে তরুণদের সংযুক্ত করতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ডলফিন দুর্বল ছোট-ছোট মাছ খায়। ভ্রান্ত ধারণা আছে, ডলফিনের ফ্যাট দিয়ে ওষুধ তৈরি হয়। আসলে এই ফ্যাটের ওষুধ কোনো কাজে আসে না। ডলফিনের উপকারের ভূমিকাটা যত ছড়িয়ে দিতে পারি, জলজ প্রাণীগুলো ততই নিরাপদ থাকবে।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বন কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ। মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ। সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডলফিনের আধিক্য আছে এমন ৫১টি এরিয়া আমরা চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে ৬টি প্রোটেক্টেড এলাকা নির্ধারণ করেছি। পাশাপাশি বিপন্ন আরও কিছু পশু-পাখি রক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সুন্দরবন থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত গাঙ্গেয় ডলফিন তথা মিঠাপানির ডলফিনের অস্তিত্ব আছে। কাজেই, আমরা সব জায়গাতেই ডলফিন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, সেজন্য এখানে বণ্যপ্রাণী রক্ষা করা কঠিন। এজন্য স্থানীয়ভাবে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
এমকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।